Daily Masnun Dhikr

দৈনন্দিন মাসনূন যিকির

বিভাগ: বেসিক ইসলাম

সম্ভাব্য পড়ার সময়: ৩ মিনিট

১) আল্লাহ্‌র নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য

রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ্‌র নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য চারটি, তার যে কোনটি দিয়েই শুরু করাতে তোমার কোনো ক্ষতি নেই। আর তা হলো –
سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ সুব্‌হা-নাল্লা-হি ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার

অর্থঃ আল্লাহ্‌ পবিত্র-মহান। সকল হামদ-প্রশংসা আল্লাহ্‌র। আল্লাহ্‌ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আল্লাহ্‌ সবচেয়ে বড়। [১] 

ফজিলতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) আরও বলেন, “সূর্য যা কিছুর উপর উদিত হয় তার চেয়ে এগুলো বলা আমার কাছে অধিক প্রিয়।” [২]  রেফারেন্সঃ [১] মুসলিমঃ ২১৩৭ [২] মুসলিমঃ ২৬৯৫

২) বিশেষ ফযীলতপূর্ণ দুআ

নিম্নোক্ত বাণীটি ১০ বার বলবে –
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া‘হদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল ‘হামদু, ওয়া হুআ ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর
অর্থঃ আল্লাহ্‌ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
ফজিলতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি উপরোক্ত কথাটি ১০ বার বলবে এটা তার জন্য এমন হবে যেন সে ইসমাঈল (আঃ)-এর সন্তানদের চারজনকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করল। রেফারেন্সঃ বুখারী ৬৪০৪
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে লোক একশ’বার এ দু’আটি পড়বেঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াহুদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া হুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর।
আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই; রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। তাহলে,
১) দশটি গোলাম আযাদ করার সমান সাওয়াব তার হবে।
২) তার জন্য একশটি সাওয়াব লেখা হবে এবং আর একশটি গুনাহ মিটিয়ে ফেলা হবে।
৩) ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান হতে মাহফুজ থাকবে।
৪) কোন লোক তার চেয়ে উত্তম সাওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে ঐ দু’আটির ’আমল বেশি পরিমাণ করবেরেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৩২৯৩ (তাওহীদ পাবলিকেশন)

৩) জান্নাতের এক রত্নভাণ্ডার

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ
উচ্চারণঃ লা হাউলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লা-হ
অর্থঃ আল্লাহ্‌র সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।
ফজিলতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) বলেন, “ওহে আব্দুল্লাহ ইবন কায়েস! আমি কি জান্নাতের এক রত্নভাণ্ডার সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করব না?” আমি বললাম, “নিশ্চয়ই হে আল্লাহ্‌র রাসূল।” তিনি বললেন, তুমি বলো – (উপরে উল্লেখিত দোয়া) রেফারেন্সঃ বুখারী ৬৩৮৪

৪) গুনাহ মাফ চাওয়া

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা গণনা করে দেখতাম, আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ) এক বৈঠকে একশত বার এই বাক্য বলেছেন –

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَىَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণঃ রাব্বিগ্‌ ফিরলী, ওয়া তুব ‘আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম
অর্থঃ হে আমার রব! আমাকে মাফ করে দাও! আমার তাওবা কবুল করো! নিশ্চয়ই তুমি তাওবা-কবুলকারী ও পরম দয়ালু। রেফারেন্সঃ সহীহ। আবু দাউদ ১৫১৬

৫) এমন যিকির যা জবানে সহজ আর মীযানের পাল্লায় ভারী

রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) বলেছেন, দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা জবানে সহজ, মীযানের পাল্লায় ভারী এবং করুণাময় আল্লাহ্‌র নিকট অতি প্রিয়। আর তা হচ্ছে –
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ
উচ্চারণঃ সুব্‌হা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুব্‌হা-নাল্লা-হিল ‘আযীম
অর্থঃ আল্লাহ্‌র প্রশংসাসহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছি। মহান আল্লাহ্‌র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। রেফারেন্সঃ বুখারী ৬৪০৬

৬) সমুদ্রের ফেনা সমপরিমাণ গুনাহ মুছে ফেলা

রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার বলে –

سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ


উচ্চারণঃ
সুব্‌হা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী

অর্থঃ আমি আল্লাহ্‌র প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করছি। 

ফজিলতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার বলে (উপরোক্ত বাক্য) তার পাপসমূহ মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে। রেফারেন্সঃ বুখারী ৬৪০৫

৭) জান্নাতের একটি খেজুর গাছ রোপন

سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ
উচ্চারণঃ সুবহা-নাল্লা-হিল ‘আযীম ওয়া বিহামদিহী
অর্থঃ মহান আল্লাহ্‌র প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।
ফজিলতঃ যে ব্যক্তি বলবে তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে।  রেফারেন্সঃ সহীহ। তিরমিযী ৩৪৬৪

৮) দ্বীনের উপর অটল থাকার দোয়া

শাহর বিন হাওশাব (রাঃ) উম্মু সালামা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘নবী (ﷺ) তার কাছে অবস্থান করার সময় কোন দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পড়তেন?’ তিনি বলেন, তিনি যে দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পড়তেন তা হলো –
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلَى دِيْنِكَ
উচ্চারণঃ ইয়া- মুকাল্লিবাল ক্কুলূবি সাব্‌বিত ক্কাল্‌বী ‘আলা- দীনিক্‌
অর্থঃ হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর অটল রাখো।
ফজিলতঃ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ) আপনি এ দোয়াটি অধিক পরিমাণে পড়েন কেন?” নবী (ﷺ) বলেন, “হে উম্মু সালামা (রাঃ)! এমন কোনও আদম (আঃ)-সন্তান নেই, যার ক্বলব আল্লাহ্‌র দু আঙুলের মাঝখানে নেই; তিনি যাকে চান সোজা রাখেন, আর যাকে চান বাঁকা করে দেন।” রেফারেন্সঃ সহীহ তিরমিযী ৩৫২২

৯) জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়া

اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘উযু বিকা মিনান্নার
অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার কাছে জান্নাত চাই; আর জাহান্নাম থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।¹
ফজিলতঃ আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কাছে তিনবার জান্নাত চায়, তখন জান্নাত বলে- হে আল্লাহ্‌, তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও; আর যে ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে সুরক্ষা চায়, তখন জাহান্নাম বলে- হে আল্লাহ্‌, তুমি তাকে জাহান্নাম থেকে সুরক্ষা দাও। রেফারেন্সঃ ইবনু মাজাহ ৯১০, তিরমিযি ২৫৭২

১০) দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষমা ও কল্যাণ চাওয়া

اللَّهُمْ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াহ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ‘আফিয়াহ’ চাই।

ফজিলতঃ 
আব্বাস ইবনু আবদিল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন, ‘আমি বললাম, “হে আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ) আমাকে এমন একটি জিনিস শিখিয়ে দিন, যা আমি আল্লাহ্‌র কাছে চাইব।” নবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহ্‌র কাছে (আফিয়াহ) কল্যাণ চান।” কিছুদিন পর আমি এসে বলি, “হে আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ) আমাকে এমন একটি জিনিস শিখিয়ে দিন, যা আমি আল্লাহ্‌র কাছে চাইব।” নবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহ্‌র রাসূলের চাচা আব্বাস! আল্লাহ্‌র কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ (আফিয়াহ) চান।” রেফারেন্সঃ তিরমিযী ৩৫১৪

১১) রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) এর উপর দরূদ পড়া

اَللَّھُمَّ صَلِّ عَلَی مُحَمَّدٍ وَّعَلَی آلِ مُحَمَّدٍ کَمَا صَلَّیْتَ عَلَی اِبْرَاھِیْمَ وَعَلَی آلِ اِبْرَاھِیْمَ اِنَّكَ حَمِیْدٌ مَّجِیْدٌ، اَللَّھُمَّ بَارِكْ عَلَی مُحَمَّدٍ وَّعَلَی آلِ مُحَمَّدٍ کَمَا بَارَکْتَ عَلَی اِبْرَاھِیْمَ وَعَلَی آلِ اِبْرَاھِیْمَ اِنَّكَ حَمِیْدٌ مَّجِیْدٌ
 
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আলী মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইব্রাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা ‘হামীদুম্ মাজীদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ্‌ আপনি মুহাম্মাদ (ﷺ) ও তাঁর পরিজনের উপর সালাত প্রেরণ করুন যেমন আপনি সালাত প্রদান করেছেন ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিজনের উপর, নিশ্চয় আপনি মহাপ্রশংসিত মহাসম্মানিত। এবং আপনি বরকত প্রদান করুন মুহাম্মাদের উপরে এবং মুহাম্মাদের পরিজনের উপরে যেমন আপনি বরকত প্রদান করেছেন ইবরাহীমের উপরে এবং ইবরাহীমের পরিজনের উপরে। নিশ্চয় আপনি মহাপ্রশংসিত মহা সম্মানিত।

ফযীলতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি সকালে দশ বার ও সন্ধ্যায় দশ বার আমার উপর দুরুদ পড়বে, সে কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত লাভ করবে।”

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ্‌ তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০টি পাপ মোচন করে দিবেন এবং ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন। রেফারেন্সঃ সুনান আন-নাসায়ী ১২৯৭ রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) আরও বলেন,যখন কোনো ব্যক্তি আমাকে সালাম দেয়, তখন আল্লাহ্‌ আমার রূহ ফিরিয়ে দেন, যাতে আমি সালামের জবাব দিতে পারি।” রেফারেন্সঃআবূ দাঊদ ২০৪১ রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) আরও বলেন, “পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র একদল ভ্রাম্যমাণ ফেরেশতা রয়েছে যারা উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম আমার কাছে পৌঁছিয়ে দেয়।” রেফারেন্সঃ নাসাঈ ১২৮২ নবী (ﷺ) আরও বলেন, “যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হলো অতঃপর সে আমার উপর দরূদ পড়লো না, সে-ই কৃপণ।” রেফারেন্সঃ তিরমিযী ৩৫৪৬

রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ্‌ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন’। রেফারেন্সঃ আবূ দাঊদ ১৫৩০

শেয়ার:
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments