৫ মিনিটের মাদ্রাসা - ১৮ শা'বান, ১৪৪৪ হিজরি | Madrasah in Just 5 Minutes

মুফতি আফজাল হুসেন ইলিয়াস রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার একজন সিনিয়র আলেম যিনি আমাদের দ্বীনের উন্নতি, সুরক্ষা এবং অগ্রগতির জন্য অসংখ্য উপায়ে বিশাল অবদান রেখেছিলেন। মুফতি আফজাল হুসেন ইলিয়াস রাহমাতুল্লাহি আলাইহির "Madrasah in Just 5 Minutes (360 Short Lessons in 10 Categories)" নামে সম্পাদিত বইটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে "৫ মিনিটের মাদ্রাসা " নামের সিরিজটি ধারাবাহিক রাখতে চাচ্ছি ইনশা আল্লাহ্। বইটিতে প্রতিদিনের জন্য পাঁচ মিনিটের শিক্ষামূলক পাঠ সংকলন করা হয়েছে। এই পাঠগুলি ১০টি বিভাগে বিভক্ত। যেমন;

০১. ইসলামিক ইতিহাস

০২. রাসূল ﷺ এর মুজিযা

০৩. একটি ফরয

০৪. একটি সুন্নাত

০৫. একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল এবং এর ফযীলত

০৬. একটি পাপ/গুনাহ

০৭. এই দুনিয়া সম্পর্কে

০৮. আখিরাত সম্পর্কে

০৯. কুরআন ও সুন্নাত থেকে রোগ নিরাময়/চিকিৎসা

১০. কুরআনের উপদেশ/ রসূলুল্লাহ ﷺ এর নসীহত।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা চাইলে আকর্ষণীয় এবং শিক্ষণীয় এই কাজ থেকে সবাই উপকৃত হবে আশা রাখছি।

আজ ১৮ শা'বান, ১৪৪৪ হিজরি

১০টি বিভাগে সাজানো ধারাবাহিক এই সিরিজে আজকের পাঠের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা হলঃ

১. ইসলামিক ইতিহাস

সালামের সূচনা

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলা আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। আল্লাহ তাআলা তাঁকে বলেন, যাও, উপবিষ্ট ঐ ফেরেশতার দলকে সালাম দাও এবং তারা তোমার সালামের কি জবাব দেয় তা মনোযোগ সহকারে শোনো। কেননা এটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সালাম (সম্ভাষণ)। আদম (আঃ) গিয়ে বলেন, আসসালামু আলাইকুম (আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক)। ফেরেশতাগণ জবাব দিলেন, আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ (আপনার উপরও শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক)। ফেরেশতাগণ “ওয়া রহমাতুল্লাহি” বাড়িয়ে বলেন। যে ব্যক্তি বেহেশতে যাবে সেই হবে আদম (আঃ) এর আকৃতি বিশিষ্ট। তখন থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত মানুষের দেহাবয়ব (উচ্চতাবারানী) ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে আসছে।

📖 রেফারেন্স: আল-আদাবুল মুফরাদ ৯৮৭

২. রাসূল ﷺ এর মুজিযা

সাহল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধের দিন বলেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা দিব, যার হাতে আল্লাহ্ তা‘আলা বিজয় দিবেন। সে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালবাসে, আর আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাকে ভালবাসেন। লোকেরা সারা রাত কাটিয়ে দেয় যে, কাকে এ পতাকা দেয়া হয়? আর পরদিন সকালে প্রত্যেকেই সেটা পাবার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আলী কোথায়? বলা হল, তাঁর চোখে অসুখ। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চোখে আপন মুখের লালা লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু‘আ করলেন। তাতে তিনি আরোগ্য লাভ করলেন। যেন তাঁর চোখে কোন অসুবিধাই ছিল না। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাতে পতাকা দিলেন। ‘আলী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, আমি তাদের সঙ্গে ততক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে যাব যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে ......

📖 রেফারেন্স: সহীহ বুখারী ৩০০৯ (তাওহীদ পাবলিকেশন)

৩. একটি ফরয

তাকদীরের প্রতি ঈমান আনা ভালো হোক কিংবা মন্দ হোক, সবকিছুই যে আল্লাহর পক্ষ থেকে পূর্ব নির্ধারিত এ কথার উপর ঈমান রাখা।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন; 'বলুন, সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে' (সূরা আন নিসা আয়াত-৭৮) সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, 
“নবী করীম বলেছেন, একবার আদম আর ও মূসা আ এর মধ্যে বিতর্ক হয়েছিল। মূসা বললেন, হে আদম! আপনি আমাদের পিতা। আমাদেরকে বঞ্চিত করেছেন এবং জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছেন। আদম বললেন, আপনি তো মূসা! আল্লাহ তাআলা আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে সম্মানিত করেছেন । লিখিত কিতাব (তাওরাত) দিয়েছেন । আপনি কি এমন বিষয়ে আমাকে তিরস্কার করেছেন যা আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বছর আগে নির্ধারণ করে রেখেছিলেন? আদম মূসা -এর উপর বিতর্কে বিজয়ী হলেন । (হাদীসটি সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে তাকদীর অধ্যায়ে আদম ও মূসা-এর বিতর্ক শিরোনামে উল্লেখ আছে) 

আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন- ঈমান হল : আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর ফেরেশতাদের, তাঁর কিতাব, তার সাক্ষাত, তাঁর রাসূলগণ, পুনরুত্থান এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনা । 
সহীহ মুসলিম ০৮ (হাদীস একাডেমী)

৪. একটি সুন্নাত

পায়খানায় প্রবেশের দু‘আ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন, তখন তিনি বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ” হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে যাবতীয় পুরুষ ও স্ত্রী শয়তানদের থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

📖 রেফারেন্স: সহীহ বুখারী ৬৩২২ (তাওহীদ পাবলিকেশন)

৫. একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল এবং এর ফযীলত

জান্নাতে বাড়ি বানানোর ১ টি সহজ আমল

রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) বলেন: “যে ব্যক্তি ১০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে, আল্লাহ্‌ তাঁর জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে রাখবেন।”

📖 রেফারেন্স: সহীহ। সহীহ আল-জামিঃ ৬৪৭২

৬. একটি পাপ/গুনাহ

সালাত ত্যাগ করা

আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, “তাদের পর আসলো (অপদার্থ) বংশধর। তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসার বশবর্তী হলো। সুতরাং তারা অচিরেই কু-কর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে; কিন্তু তারা নয় যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।" সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৯-৬০
নামায বা সালাত হলো মুমিন ও কাফিরের মধ্যে মাপকাঠি। সালাত ত্যাগ করলে মানুষ কাফিরদের দলভুক্ত হয়ে যাবে। 
রাসূলুল্লাাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “একজন মানুষ ও কুফরী-শিরকের মধ্যে রয়েছে নামায ত্যাগ করা" মুসলিম, আস-সহীহ ১/৮৮। 
অন্য হাদীসে তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল সে কাফির হয়ে গেল” ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ ৪/৩২৩; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/১৩৭, ১৩৯। হাদীসটি হাসান। 
কুরআন ও হাদীসের শিক্ষার আলোকে একথা নিশ্চিত যে, নামায মূসলিমের মূল পরিচয়। নামায ছাড়া মুসলিমের অস্তিত্ব কল্পনাতীত। নামায পরিত্যাগকারী কখনোই মুসলিম বলে গণ্য হতে পারেন না।

৭. এই দুনিয়া সম্পর্কে

ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া মোটেই ভরসা করার যোগ্য নয়

তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হল বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে আছে কঠিন আযাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়

📖 রেফারেন্স: সূরা আল-হাদীদ | আয়াত ২০

৮. আখিরাত সম্পর্কে

কবর ও তার বিপর্যয়কর পরিস্থিতি

উসমান (রাঃ) এর মুক্তদাস হানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উষমান ইবনে আফফান (রাঃ) যখন কোন কবরের পাশে দাঁড়াতেন তখন এতো কাঁদতেন যে, তার দাড়ি ভিজে যেতো। তাকে বলা হলো, আপনি জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্মরণ করেন তখন তো এভাবে কান্নাকাটি করেন না, অথচ কবর দেখলেই কাঁদেন! তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় কবর হলো আখেরাতের মনযিলসমূহের মধ্যকার সর্বপ্রথম মনযিল। কেউ যদি এখান থেকে রেহাই পায়, তবে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলো কবরের চেয়েও সহজতর হবে। আর সে যদি এখান থেকে রেহাই না পায়, তবে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলো আরো ভয়াবহ হবে। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কখনও এমন কোন দৃশ্য অবলোকন করিনি যার তুলনায় কবর অধিক ভয়ংকর নয়

📖 রেফারেন্স: সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৬৭

৯. কুরআন ও সুন্নাত থেকে রোগ নিরাময়/চিকিৎসা

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুদ্ধের ময়দানে যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মাথার শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গেল ও তাঁর মুখমন্ডল রক্তে ভিজে গেল এবং তাঁর সামনের দাঁত ভেঙ্গে গেল, তখন ‘আলী (রাঃ) ঢালে ভরে ভরে পানি আনতেন এবং ফাতিমাহ (রাঃ) ক্ষতস্থান ধুয়ে দিচ্ছিলেন। যখন ফাতিমাহ (রাঃ) দেখলেন যে, পানির চেয়ে রক্ত পড়া আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন একখানা চাটাই নিয়ে তা পোড়ালেন এবং তার ছাই ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলেন, তাতে রক্ত বন্ধ হয়ে গেল

📖 রেফারেন্স: আল-আদাবুল মুফরাদ ৯৮৭

১০. রসূলুল্লাহ ﷺ এর নসীহত

যে হারাম কাজসমূহ থেকে নিবৃত থাকে সে-ই সর্বপেক্ষা ইবাদতকারী

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কে আমার নিকট থেকে এই বিষয়গুলি গ্রহণ করবে, অনন্তর সে এগুলোর উপর নিজেও আমল করবে এবং যে আমল করবে তাকে সেগুলো শিখাবে? আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আছি। তিনি আমার হাত ধরলেন এবং পাঁচ পর্যন্ত গুনে গুনে বললেনঃ হারাম থেকে বাঁচবে তবে সর্বাপেক্ষা ইবাদতকারী লোক হিসাবে গণ্য হবে; তোমার তাকদীরে আল্লাহ তাআলা যা বণ্টন করে রেখেছেন সে বিষয়ে সন্তুষ্ট থাকবে, তবে সর্বাপেক্ষা অমুখাপেক্ষী লোক হতে পারবে; প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যহার করবে তবে প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে; নিজের জন্য যা পছন্দ কর মানুষের জন্যও তা পছন্দ করবে তাহলে প্রকৃত মুসলিম হতে পারবে; বেশী হাসবে না, কেননা বেশী হাস্য-কৌতুক হৃদয়কে মুর্দা বানিয়ে দেয়

📖 রেফারেন্স: সুনান আত তিরমিজী ২৩০৮ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

Previous Post Next Post