Dreams and Their Impact on Our Lives

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বপ্ন এবং আমাদের জীবনে এর প্রভাব

বিভাগ: বেসিক ইসলাম

সম্ভাব্য পড়ার সময়: ২ মিনিট

স্বপ্ন কি? ইসলামে এর গুরুত্ব!

স্বপ্ন মানুষের একটি মানসিক অবস্থা, যাতে মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় বিভিন্ন ঘটনা অবচেতনভাবে অনুভব করে থাকে। স্বপ্ন দেখার সময় ঘটনাগুলো সত্যি বলে মনে হয়। অধিকাংশ সময় দ্রষ্টা নিজে সেই ঘটনায় অংশগ্রহণ করছে বলে মনে করতে থাকে।

ইসলামে স্বপ্ন অনেক গুরুত্ব বহন করে। রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“মুসলিম ব্যক্তি যে ভালো স্বপ্ন দেখে অথবা তাকে যে ভালো স্বপ্ন দেখানো হয়, তা ব্যতিত নবুওয়াতের সুসংবাদের কিছুই অবশিষ্ট নাই।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৮৯৯)

এবং সহিহ বুখারীতে উল্লেখ আছে যে,

“নেক্‌কার লোকের ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।” ( সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৯৮৩ )

কিয়ামাতের নিদর্শন হিসেবে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে,

“যখন কিয়ামাতের সময় সন্নিকটে হয়ে আসবে তখন প্রায়শ খাঁটি মুসলিমের স্বপ্ন মিথ্যা ও ভ্রান্ত হবে না। তোমাদের মাঝে অধিক সত্যভাষী লোক সর্বাধিক সত্য ও বাস্তব স্বপ্নদ্রষ্টা হবে।” (মুসলিম ৫৭৯৮)

রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে স্বপ্নে দেখার প্রভাবও আমাদের জীবনে উল্লেখযোগ্য। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করুন।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে  ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখেছে সে আমাকেই দেখেছে। কেননা আমার স্বরূপ ধারণ শয়তানের পক্ষে সম্ভব নয়।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯০২)

স্বপ্নের প্রকারভেদ

স্বপ্ন তিন প্রকার। যথাঃ

  • ভাল স্বপ্ন আল্লাহর তরফ হতে সুসংবাদ বাহক।
  • দুঃস্বপ্ন – যা শাইতানের পক্ষ হতে দুর্ভাবনা তৈরি করে।
  • আরেক ধরনের স্বপ্ন যা মানুষ তার মনের সাথে কথা বলে এবং ভাবনা-চিন্তা করে তা থেকে উদ্ভূত।(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৭৯৮)

করণীয়

১) ভালো স্বপ্নের ক্ষেত্রেঃ

“যদি কোন ভাল স্বপ্ন দেখে তাহলে সু-সংবাদ গ্রহণ করবে। আর যাকে সে মুহাব্বাত করে এমন ব্যক্তি ব্যতীত কারো নিকট তা বর্ণনা করবে না।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৭৯৫)

২) খারাপ স্বপ্নের ক্ষেত্রেঃ

  • কেউ স্বপ্নে অপছন্দনীয় কিছু দেখলে সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে,
  • আল্লাহর নিকট অভিশপ্ত শয়তান থেকে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করে,
  • যে পাশে শোয়া ছিলো তা পরিবর্তন করে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯০৯)
  • সে যেন তখন উঠে গিয়ে নামায আদায় করে। (জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২২৯১)
  • সূরা আল ফালাক্ব ও সূরা আন্ নাস পড়া।
  • স্বপ্নের অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাওয়া। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৭৯৩)
  • কেউ অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে সে যেন ঘুমের মধ্যে তার সাথে শয়তানের খেলা লোকের নিকট ব্যক্ত না করে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯১৩)

এই কাজগুলো করলে দুঃস্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না ইনশা আল্লাহ্‌।

সতর্কতা

১) কেউ যেন তার স্বপ্নের কথা আমানতদার অথবা স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে পারদর্শী ব্যক্তি ব্যতীত কারো কাছে তা ব্যক্ত না করে। কারণ, স্বপ্নের ব্যাখ্যা না করা পর্যন্ত তা উড়ন্ত পাখির পায়ে ঝুলন্ত জিনিস সদৃশ। তার ব্যাখ্যা করা হলে তা বাস্তবায়িত হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯১৪)

২) মিথ্যা স্বপ্ন বলা (স্বপ্ন নিয়ে মিথ্যা বলার ফল ভয়াবহ)

রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যা হল নিজের চোখ দিয়ে এমন কিছু দেখার দাবি করা যা দুই চোখ দেখতে পায়নি।” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭০৪৩)

“যে ব্যক্তি মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করবে তাকে দু’টি যবের দানার মধ্যে গিট লাগাতে বাধ্য করা হবে এবং এজন্য তাকে শাস্তি দেয়া হবে।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯১৬)

আল্লাহ ﷻ আমাদের সুন্দর স্বপ্ন দেখার তৌফিক দান করুন এবং দুঃস্বপ্ন দেখা ও তার ক্ষতি থেকে হেফাজত করুন। 

আমীন

শেয়ার:

Leave a Comment