একনজরে...
আল্লাহর আদেশ
তুমি ক্ষমা প্রদর্শন কর এবং ভালো কাজের আদেশ দাও। আর মূর্খদের থেকে বিমুখ থাক।
আল-আ’রাফ | আয়াত: ১৯৯
সুতরাং তোমাকে যে আদেশ দেয়া হয়েছে, তা ব্যাপকভাবে প্রচার কর এবং মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।
আল-হিজর | আয়াত: ৯৪
হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
আল-মায়িদাহ | আয়াত: ৬৭
আর আল্লাহর আয়াতসমূহ তোমার প্রতি নাযিল হওয়ার পর তারা যেন তোমাকে তা থেকে বিরত রাখতে না পারে, তোমার রবের প্রতি তুমি আহবান কর এবং তুমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
আল-কাসাস | আয়াত: ৮৭
রাসূলাল্লাহ ﷺ এর নির্দেশ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পক্ষ থেকে একটি মাত্র আয়াত হলেও তা (মানুষের নিকট) পৌছে দাও। তিরমিযী ২৬৬৯
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন: তোমরা অবশ্যই সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, বিপদগ্ৰস্তও হবে এবং তোমাদের মাধ্যমে অনেক জায়গা বিজিতও হবে। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি সেই যুগ পায় তাহলে সে যেন আল্লাহ্ তা’আলাকে ভয় করে এবং সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান করে। আর যে লোক ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামেই তার থাকার জায়গা তৈরী করে নেয়। তিরমিযী ২২৫৭
সফলতা লাভের উপায়
আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।
আলে-ইমরান | আয়াত: ১০৪
আল্লাহর দয়া লাভের উপায়
আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা সালাত কায়িম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
আত-তাওবাহ | আয়াত: ৭১
অন্যের ভালো কাজের সওয়াব লাভ
যে ভাল সুপারিশ করবে, তা থেকে তার জন্য একটি অংশ থাকবে এবং যে মন্দ সুপারিশ করবে তার জন্যও তা থেকে একটি অংশ থাকবে। আর আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের সংরক্ষণকারী।
আন-নিসা | আয়াত: ৮৫
রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি (দাওয়াতের মাধ্যমে) ইসলামের একটি (মৃত) সুন্নাত চালু করবে সে তার নেকী পাবে এবং ঐ সুন্নাতের প্রতি মানুষ আমল করে যত নেকী পাবে তাদের সমপরিমাণ নেকী তার আমলনামায় লেখা হবে, তবে তাদের কারো নেকী কমকরা হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ আমল চালু করবে সে জন্য তার পাপ রয়েছে। আর ঐ মন্দ আমল করে যত লোক যে পরিমাণ পাপ অর্জন করবে সবার সমপরিমাণ পাপ তার আমলনামায় লেখা হবে, তবে তাদের কারো পাপ এতটুকুও কম করা হবে না’ (মুসলিম ২২৪১)
সর্বোত্তম উম্মতের বৈশিষ্ট্য
তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত,যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কতক ঈমানদার। তাদের অধিকাংশই ফাসিক।
আলে-ইমরান | আয়াত: ১১০
রাসূলাল্লাহ ﷺ এর প্রকৃত অনুসারীর বৈশিষ্ট্য
যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নবী; যার গুণাবলী তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃংখল- যা তাদের উপরে ছিল- অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম।
আল-আ’রাফ | আয়াত: ১৫৭
আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ লাভ
তারা তাওবাকারী, ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকূকারী, সিজ্দাকারী, সৎকাজের আদেশদাতা, অসৎকাজের নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হেফাযতকারী। আর মুমিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও।
আত-তাওবাহ | আয়াত: ১১২
ন্যায়পরায়ন শাসকের বৈশিষ্ট্য
তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।
আল-হজ্জ | আয়াত: ৪১
নেককারদের বৈশিষ্ট্য
তারা সমান নয়। আহলে কিতাবের মধ্যে একদল ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তারা রাতের বেলায় আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তারা সিজদা করে।তারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে এবং তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে। আর তারা কল্যাণকর কাজে দ্রুত ধাবিত হয় এবং তারা নেককারদের অন্তর্ভুক্ত।আর তারা যে ভাল কাজ করে, তা কখনো অস্বীকার করা হবে না। আর আল্লাহ মুত্তাকীদের সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
সূরা আলে ইমরান ১১৩-১১৫
সর্বোত্তম কথা
আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’?
হা-মীম আস-সাজদাহ (ফুসসিলাত) ৩৩
সৌভাগ্যের কারণ
অতঃপর সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যারা ঈমান এনেছে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্যধারণের, আর পরস্পরকে উপদেশ দেয় দয়া-অনুগ্রহের। তারাই সৌভাগ্যবান।
আল-বালাদ | আয়াত: ১৭-১৮
চরম ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়
সময়ের কসম, নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।
সূরা আসর ১-৩
আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি
অতঃপর যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, যখন তারা তা ভুলে গেল তখন আমি মুক্তি দিলাম তাদেরকে যারা মন্দ হতে নিষেধ করে। আর যারা যুলম করেছে তাদেরকে কঠিন আযাব দ্বারা পাকড়াও করলাম। কারণ, তারা পাপাচার করত।
আল-আ’রাফ | আয়াত: ১৬৫
সদকার সমতুল্য
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের প্রতি তোমার মুচকি হাস্যমুখ করাও সদকাস্বরূপ, কাউকে সৎকাজের উপদেশ দেয়াটাও একটা দান, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করাও একটা দান এবং পথ হারানোর মত স্থানে কাউকে পথ দেখানোও একটা দান’। (তিরমিযী ১৯৫৬)
ঈমানের পরিচয়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তায়াআলা আমার পুর্বে যখনই কোন জাতির মাঝে নবী প্রেরণ করেছেন তখনই উম্মাতের মধ্যে তাঁর এমন হাওয়ারী ও সাথী দিয়েছেন, যারা তাঁর পদাংক অনুসরণ করে চলতেন, তাঁর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। অনন্তর তাদের পরে এমন সব লোক তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে, যারা মুখে যা বলে বেড়াত কাজে তা পরিণত করত না, আর সেসব কর্ম সস্পাদন করত যেগুলোর জন্য তারা আদিষ্ট ছিল না। এদের বিরুদ্ধে যারা হাত দ্বারা জিহাদ করবে, তারা মুমিন; যারা এদের বিরুদ্ধে মুখের কথা দ্বারা জিহাদ করবে, তারাও মুমিন এবং যারা এদের বিরুদ্ধে অন্তরে (ঘূণা পোষণদ্বারা) জিহাদ করবে তারাও মুমিন। এর বাইরে সরিষার দানার পরিমাণেও ঈমান নেই। মুসলিম ৮৫
দ্বীনের সারকথা
রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘নছীহত করাই দ্বীন’। তিরমিযী ১৯২৬
চেহারায় নূর লাভ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা সেই ব্যক্তিকে আলোকোজ্জ্বল করুন যে আমার কথা শুনেছে, তা কণ্ঠস্থ করেছে, সংরক্ষণ করেছে এবং অন্যের নিকট পৌছে দিয়েছে। অনেক জ্ঞানের বাহক যার নিকট জ্ঞান বহন করে নিয়ে যান তিনি তার (বাহকের) চাইতে বেশি বুদ্ধিমান হতে পারেন। তিরমিযী ২৬৫৮
সদকায়ে জারিয়া
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মুমিনের মৃত্যুর পর যে সব নেক আমলের নেকী মুমিনের নিকট পৌঁছবে তা হচ্ছে (১) ইলম, যা শিক্ষা করেছে এবং দাওয়াতের মাধ্যমে প্রচার ও প্রসার করেছে (২) নেক সন্তান, যাকে পৃথিবীতে রেখে গেছে (৩) কুরআন, যা ওয়াকফ করে রেখে গেছে। (৪) মসজিদ, যা সে নির্মাণ করে গেছে (৫) সরাইখানা, যা সে পথিকের জন্য নির্মাণ করে গেছে (৬) খাল, যা সে খনন করে গেছে অথবা (৭)সদকা, যা সে সুস্থ ও জীবিত থাকাবস্থায় দান করে গেছে’ (ইবনু মাজাহ ২৪২)
সর্বোত্তম সম্পদ
রাসূলাল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমার দ্বারা একটি মানুষকে হিদায়াত করেন, তাহলে তা তোমার জন্য (আরবের শ্রেষ্ঠ সম্পদ) লাল উঁটনী অপেক্ষাও উত্তম। বুখারী ২৯৪২
রাস্তার হক আদায়
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা রাস্তায় বসা হতে বিরত থাক।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে মজলিসে না বসলে তো আমাদের উপায় নেই; আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যখন তোমরা (সেখানে) না বসে মানবেই না, তখন তোমরা রাস্তার হক আদায় কর।’’ তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি?’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি সংযত রাখা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, সালামের জবাব দেওয়া, ভাল কাজের নির্দেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা।’’বুখারী ২৪৬৫
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ না করার পরিণতি
১. নিফাকের পরিচয়
মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা একে অপরের অংশ, তারা মন্দ কাজের আদেশ দেয়, আর ভাল কাজ থেকে নিষেধ করে, তারা নিজদের হাতগুলোকে সঙ্কুচিত করে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে তিনিও তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন*, নিশ্চয় মুনাফিকরা হচ্ছে ফাসিক।
আত-তাওবাহ | আয়াত: ৬৭
২. অভিশাপ লাভের কারণ
বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদেরকে দাঊদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসার মুখে লা‘নত করা হয়েছে। তা এ কারণে যে, তারা অবাধ্য হয়েছে এবং তারা সীমালঙ্ঘন করত।তারা পরস্পরকে মন্দ থেকে নিষেধ করত না, যা তারা করত। তারা যা করত, তা কতইনা মন্দ! সূরা আল মায়িদা ৭৮-৭৯
৩. দুআ কবুল না হওয়ার কারণ
‘‘সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! তোমরা অবশ্যই একে অপরকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। তা না হলে আল্লাহ্ তা‘আলা অচিরেই তোমাদের উপর তাঁর পক্ষ থেকে বিশেষ শাস্তি পাঠাবেন। তখন তোমরা তাঁকে ডাকবে; অথচ তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন না’’। (তিরমিযী ২১৬৯)
৩. আল্লাহর আযাব নাযিল হওয়ার কারণ
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় মানুষ যখন কোন যালিম ব্যক্তিকে দেখে, অতঃপর তারা তার হাতকে যুলুম থেকে বিরত না রাখে, হয়তবা অচিরেই আল্লাহ আমভাবে তাদের সকলের উপর শাস্তি চাপিয়ে দিতে পারেন’ (তিরমিযী ১৯৫৬)
৪. সমগ্র জাতি ধ্বংসের কারণ
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে মহান আল্লাহর সীমার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং যে সীমালংঘন করে, তাদের দৃষ্টান্ত সেই যাত্রীদলের মতো, যারা লটারীর মাধ্যমে এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিল। তাদের কেউ স্থান পেল উপরতলায়, কেউ নীচতলায়। নীচতলার লোকেরা পানি সংগ্রহকালে উপরতলার লোকদের ডিঙ্গিয়ে যেত। তখন নীচতলার লোকেরা বলল, উপরতলার লোকদের কষ্ট না দিয়ে আমরা যদি নিজেদের অংশে একটি ছিদ্র করে নিই (তাহলে ভাল হতো)। এমতাবস্থায় উপরতলাবাসীরা যদি এদেরকে আপন মর্জির উপর ছেড়ে দেয় তাহলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা এদের হাত ধরে রাখে (বিরত রাখে) তবে তারা এবং সকলেই রক্ষা পাবে’ (বুখারী ২৬৮৬)
৫. আল্লাহর ক্রোধ এ নিপতিত
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ মহীয়ান-গরীয়ান জিবরীল (আ.)-কে আদেশ করেন যে, অমুক শহর বা জনপদটিকে সেটার বাসিন্দাসহ উল্টিয়ে দাও। তখন জিবরীল (আ.)বললেনঃ হে প্রভু! ঐ জনপদে তোমার অমুক বান্দা রয়েছে, যে এক মুহূর্ত তোমার নাফরমানি করেনি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, তার ও তাদের সকলের ওপর শহরটিকে উল্টিয়ে দাও। কারণ ঐ ব্যক্তির মুখমণ্ডলে পাপীদের পাপাচার দেখে আমার সন্তুষ্টির জন্য এক মুহূর্তের জন্যও পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ- সে পাপীদের পাপ এক মুহূর্তের জন্যও খারাপ মনে করেনি। মিশকাত ৫১৫২
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করার নিয়ম
১. হিকমত এর সাথে দাওয়া
তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে।এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন।
আন-নাহল | আয়াত: ১২৫
২. সঠিক জ্ঞান অনুসারে দাওয়া
বল, ‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’।
ইউসুফ | আয়াত: ১০৮
৪. উত্তমভাবে দাওয়া দেওয়া
আর ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত কর তা দ্বারা যা উৎকৃষ্টতর, ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে সে যেন হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।
হা-মীম আস-সাজদাহ (ফুসসিলাত) | আয়াত: ৩৪
৫. বিপদ আপদে সবর করা
‘হে আমার প্রিয় বৎস, সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে নিষেধ কর এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধর। নিশ্চয় এগুলো অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ’।
লুকমান | আয়াত: ১৭
৬. নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া না করা
আবূ অলীদ উবাদাহ ইবনু সামেত (রাঃ) বলেন ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এই মর্মে বাইয়াত করলাম যে, দুঃখে-সুখে, আরামে ও কষ্টে এবং আমাদের উপর (অন্যদেরকে) প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায় আমরা তাঁর পূর্ণ আনুগত্য করব। রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে তার নিকট থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার লড়াই করব না; যতক্ষণ না তোমরা (তার মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী দেখ, যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল রয়েছে। আর আমরা সর্বদা সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করব না।’ সহীহুল বুখারী ৬৭০৭
অন্যকে আদেশ নিষেধ করে নিজে না মানার পরিণতি
১. আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত হওয়া
হে ঈমানদারগণ, তোমরা তা কেন বল, যা তোমরা কর না? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর নিকট বড়ই ক্রোধের বিষয়।
আস-সাফ | আয়াত: ২-৩
২. নিন্দনীয় কাজ
অর্থাৎ (শুআইব বলল,) আর আমি এটা চাই না যে, আমি তোমাদের বিপরীত সেই সব কাজ করি, যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করছি। (সূরা হূদ ৮৮ আয়াত)
অর্থাৎ “কি আশ্চর্য! তোমরা নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দাও, অথচ তোমরা কিতাব (গ্রন্থ) অধ্যয়ন কর, তবে কি তোমরা বুঝ না?” সূরা বাক্বারাহ ৪৪ আয়াত)
৩. পরকালে শাস্তি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মি’রাজের রাতে আমি বহু লোককে দেখেছি যে, তাদের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে জিবরীল! এরা কারা? জিবরীল (আ.) বললেনঃ এরা আপনার উম্মাতের মধ্যে বক্তাগণ, যারা লোকেদেরকে ভালো কাজের আদেশ করত; কিন্তু নিজেদেরকে ভুলে যেত। অর্থাৎ- নিজেরা সৎকাজ করত না।মিশকাত ৫১৪৯
৪. জাহান্নামে শাস্তি
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন নিয়ে আসা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে করে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। আর সে তা নিয়ে ঘুরতে থাকবে যেমনিভাবে গাধা আটা পিষা জাঁতার সাথে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামীরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি আমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হ্যাঁ। আমি তোমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজেই তা করতাম না। আর খারাপ কাজ হ’তেতোমাদেরকে নিষেধ করতাম, কিন্তু আমি নিজেই তা করতাম’ (বুখারী ৭০৯৮)
Leave a Comment