একনজরে...
১) ইখলাস সহকারে কুরআন তেলাওয়াত করা
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
নিশ্চয় আমি তোমার কাছে যথাযথভাবে এই কিতাব নাযিল করেছি; অতএব আল্লাহর ‘ইবাদাত কর তাঁরই আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে। সূরা আয যুমার ৩৯:২
২) পবিত্রতা অর্জন করা
কুরআন তেলাওয়াতে যথাযথ পবিত্রতা অর্জন করায় সচেতন থাকা
নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন,যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে,কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া। সূরা ওয়াকিয়া ৫৬:৭৭-৭৯
৩) মিসওয়াক ব্যবহার করা
বান্দা যখন মেসওয়াক করে সালাতে দন্ডায়মান হয়, তখন ফেরেশতা তার পিছনে দন্ডায়মান হয়ে তার কেরাআত শুনতে থাকে, অতঃপর তার নিকটবর্তী হতে থাকে- (অথবা এধরণের কোন শব্দ বলেছেন) এমনকি তার মুখে নিজের মুখ রেখে দেয়। অতঃপর মুসল্লীর মুখ থেকে কুরআনের কোন শব্দ বের হওয়া মাত্রই তা ফেরেশতার পেটে চলে যায়। সুতরাং কুরআনের জন্য তোমরা তোমাদের মুখমন্ডলকে পবিত্র কর।’’ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১৫
৪) আউযুবিল্লাহ পড়া
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
যখন তুমি কুরআন পড়বে তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে পানাহ চাও। সূরা আন নাহল ১৬:৯৮
৫) তারতিল সহকারে পড়া
সাহাবী ও তাবেয়ীগণেরও এই অভ্যাস ছিল। তাছাড়া, যথাসম্ভব সুললিত স্বরে তিলাওয়াত করাও তারতীলের অন্তর্ভুক্ত।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা কোন বিষয়ের প্রতি ঐরূপ কান লাগিয়ে শুনেন না যেরূপ তিনি নবীর সুমধুর তিলাওয়াত শুনেন। [বুখারী: ৫০২৩, ৫০২৪]
তবে পরিস্কার ও বিশুদ্ধ উচ্চারণসহ শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ চিন্তা করে তদ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়াই আসল তারতীল। অনুরূপভাবে সুন্দর করে পড়াও এর অংশ।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে কুরআনকে সুন্দর স্বরে পড়ে না সে আমার দলভুক্ত নয়।” [বুখারী: ৭৫২৭]
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
আর স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন আবৃত্তি কর। সূরা আল মুযযাম্মিল ৭৩:৪
৬) সুন্দর কণ্ঠে তিলাওয়াত করা
তোমাদের (সুমিষ্ট) শব্দ দ্বারা কুরআনকে সৌন্দর্যমন্ডিত কর। কারণ, মধুর শব্দ কুরআনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। হাকেম ২১২৫, দারেমী ৩৫০১, সঃ জামে’ ৩৫৮১
ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে স্পষ্টভাবে উত্তম সুরে কুরআন পাঠ করে না। রাবী বলেনঃ তখন আমি আবু মুলায়কাকে বলি, যে আবু মুহাম্মাদ! যদি কেউ এরূপে মধুর স্বরে তা পাঠ না করতে পারে? তিনি বলেন, সে ব্যক্তি তার সাধ্যানুযায়ী তা উত্তমরূপে তিলাওয়াতের চেষ্টা করবে। সুনান আবূ দাউদ ১৪৭১ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৭) সিজদার আয়াত এ সিজদা করা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
মানুষ যখন সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সাজদায় যায়, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে হায়! আমার দুর্ভাগ্য! ইবনু কুরায়বের বর্ণনায় রয়েছে, হায়রে, আমার দুর্ভাগ্য! নবী আদম সাজদার জন্য আদিষ্ট হলো। তারপর সে সিজদা করলো এবং এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হলো। আর আমাকে সাজদার জন্য আদেশ করা হলো, কিন্তু আমি তা অস্বীকার করলাম, ফলে আমার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হলো। সহীহ মুসলিম ৮১
৮) রুকু সিজদায় কুরআন না পড়া
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মৃত্যুশয্যায় থাকাকালীন সময়ে) হুজরার পর্দা তুলে দিলেন। লোকেরা এ সময় আবূ বকরের পিছনে সালাতের কাতারে দাঁড়ানো ছিল। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! আর নুবুওয়াতের ধারা অবশিষ্ট থাকবে না। তবে মুসলিমরা সত্যস্বপ্ন দেখবে অথবা তাদের দেখানো হবে। সাবধান! আমাকে নিষেধ করা হয়েছে আমি যেন রুকু বা সাজদারত অবস্থায় কুরআন পাঠ না করি। তোমরা রুকু অবস্থায় মহান প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত বর্ণনা করবে এবং সাজদারত অবস্থায় অধিক দু’আ পড়ার চেষ্টা করবে, কেননা তোমাদের দু’আ কবুল হওয়ার উপযোগী। হাদীসটি আবূ বকর (রহঃ) حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ سُلَيْمَانَ বলে রিওয়ায়াত করেছেন। সহীহ মুসলিম ৯৬১ (হাদীস একাডেমী)
৯) ধৈর্য ধরে তিলাওয়াত করা
খুব কষ্টদায়ক হওয়া সত্ত্বেও যে বারবার কুরআন মাজীদ পাঠ করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে। সহীহ বুখারী ৪৯৩৭
১০) রাতদিন তিলাওয়াত করা
তোমরা কুরআনকে স্মরণ রাখ। কারণ কুরআন মানুষের হৃদয় থেকে পা বাঁধা পলায়নপর চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও অধিক পলায়নপর। ছাড়া পেলেই পালিয়ে যায় অর্থাৎ স্মরণ রাখার চেষ্টা না করলেই ভুলে যায়।“কুরআনের হাফিয যদি রাতে ও দিনে কুরআন মাজীদ পড়ে তাহলে তা স্মরণে রাখে, অন্যথায় ভুলে যায়।” সহীহ মুসলিম ১৭২৫,১৭২৬
১১) নির্দিষ্ট সময়সীমায় কুরআন পাঠ সমাপ্ত করা
আবদুল্লাহ্ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ’’এক মাসে কুরআন পাঠ সমাপ্ত কর।’’ আমি বললাম, ’’আমি এর চেয়ে অধিক করার শক্তি রাখি।’’ তখন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ’’তাহলে সাত দিনে তার পাঠ শেষ করো এবং এর চেয়ে কম সময়ে পাঠ শেষ করো না।’’ বুখারী ৫০৫৪
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিন দিনের কম সময়ে কুরআন খতম করেছে, সে কিছুই হৃদয়ঙ্গম করতে পারেনি। সুনানে আবু দাউদ ১৩৯৪
১২) মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটলে পড়া ত্যাগ করা
নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইবাদাত মনের চাহিদার অনুকূল হয় তিলাওয়াত করতে থাক এবং (তাতে) মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটলে পড়া ত্যাগ কর। সহীহ বুখারী ৫০৬০
১৩) তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় কুরআন না পড়া
তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি রাতে সালাত আদায় করতে ওঠে আর (ঘুমের প্রভাবে) তার কুরআন তিলাওয়াতে আড়ষ্টতা আসে অর্থাৎ সে কি বলছে সে সম্পর্কে তার কোন চেতনা না থাকে তাহলে যেন সে শুয়ে (ঘুমিয়ে) পড়ে। সহীহ মুসলিম ১৭২১
১৪) ভুলে গেলে কী বলতে হবে
যদি কেউ এভাবে বলে যে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি তাহলে তা তার জন্য খুবই খারাপ। বরং তাকে তো ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সহীহ মুসলিম ১৭২৬
১৫) বিনয় অবলম্বন করা
নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে।আর তারা বলে, ‘পবিত্র মহান আমাদের রব! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে’।‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে’। সূরা বনী ইসরাইল ১৭:১০৭-১০৯
১৬) আশ্রয় চাওয়া
রাসূলাল্লাহ থেমে থেমে ধীরে ধীরে (কুরআন) পড়ছিলেন এবং তাসবীর আয়াত আসলে তাসবীহ পড়ছিলেন আর কিছু চাওয়ার আয়াত আসলে চাইলেন। যখন আশ্রয় প্রার্থনা করার কোন আয়াত পড়ছিলেন তখন আশ্রয় প্রার্থনা করছিলেন। সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)১৬৯৯
১৭) জান্নাত প্রার্থনা করা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ’তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তার অসীলায় জান্নাত প্রার্থনা কর, সেই জাতি আসার পূর্বে, যারা তার অসীলায় দুনিয়া প্রার্থনা করবে। কুরআন তিন শ্রেণীর লোক শিক্ষা করবে; কিছু লোক তা নিয়ে ফখর করে বেড়াবে, কিছু লোক তার মাধ্যমে পেট চালাবে এবং কিছু লোক মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তা তেলাঅত করবে।’ বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ২৬৩০, সিলসিলাহ সহীহাহ ২৫৮
১৮) তিলাওয়াতকারী ব্যক্তি যেন এর দ্বারা শুধু আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করে
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদা তিনি জনৈক কুরআন তিলাওয়াতকারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকটি তখন কুরআন পাঠ করতে করতে (মানুষের নিকট) ভিক্ষা করছিল। তিনি “ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজি‘ঊন” পাঠ করে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কুরআন তিলাওয়াতকারী ব্যক্তি যেন এর দ্বারা শুধু আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করে। কেননা অচিরেই এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা কুরআন পাঠের মাধ্যমে মানুষের নিকট ভিক্ষা করবে। জামে’ আত-তিরমিজি ২৯১৭
১৯) কুরআন অনুধাবন করা
আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে। সূরা সোয়াদ ৩৮:২৯
তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা- ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে? সূরা মুহাম্মদ ৪৭:২৪
২০) বর্ণিত ইলম ও আমল শিক্ষা করা
আবু আব্দুর রহমান সুলামী (রঃ) বলেন, ’আমাদেরকে আমাদের ওস্তাদগণ বর্ণনা করেছেন যে, যাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ছাত্র ছিলেন তাঁরা দশটি আয়াত শিখলে ততক্ষণ পর্যন্ত আর আগে বাড়তেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ দশ আয়াতের বর্ণিত ইলম ও আমল শিক্ষা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, আমরা ইলম ও আমল উভয়ই (একই সময়ে) শিক্ষা করেছি। আহমাদ ২৩৪৮২