xr:d:DAFvFK21ZRo:230,j:3938822185377736228,t:24040908

ঈদুল ফিতরের গুরুত্বপূর্ণ ১১ টি সুন্নাহ

বিভাগ: বেসিক ইসলাম

সম্ভাব্য পড়ার সময়: ৩ মিনিট

ঈদুল ফিতর, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটো সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। যারা এক মাস ধরে সিয়াম সাধনা করেছেন, তাদের জন্যই আনন্দ ও উৎসবের দিন হচ্ছে ঈদুল ফিতর। এ দিনটি আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার লাভেরও দিন। ঈদুল ফিতরের ১১ টি সুন্নাহ যা নবীজি সা. ও সাহাবারা পালন করতেন তা নিম্নে বর্ণনা করা হল।

একনজরে...

১. ঈদের দিন আগে আগে ঘুম থেকে উঠা ও ফজরের নামাজ জামাআতের সাথে পড়া এবং ঈদগাহে একটু আগে আগে যাওয়া

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা, ফজরের নামাজ জামাআতের সহিত আদায় করা এবং আগে আগে ঈদগাহে যাওয়া।

২. খেজুর/মিষ্টিজাতীয় কিছু খেয়ে মসজিদে/ঈদগাহে আসা

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ঈদুল ফিত্রের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক বর্ণনায় আনাস (রাযি.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বিজোড় সংখ্যায় খেতেন। (সহীহ বুখারী ৯৫৩)

৩. গোসল করা, সুগন্ধি ও মেসওয়াক ব্যবহার করা

ঈদের নামাযের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব।

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত যে, তিনি ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (মালেক, মুওয়াত্তা ৪২৮নং)

রসূল (ﷺ) বলেন,

‘‘তোমাদের দুনিয়ার মধ্যে আমার কাছে স্ত্রী ও খোশবুকে প্রিয় করা হয়েছে। আর নামাযকে করা হয়েছে আমার চক্ষুশীতলতা।’’ (আহমাদ, নাসাঈ, হাকেম, সহীহুল জা’মে হা/৩১২৪)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

আমার উম্মাতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক সালাতের সাথে তাদের মিস্ওয়াক করার হুকুম করতাম। (সহীহ বুখারী ৮৮৭)

৪. যে পোশাক আছে তার মধ্যে উত্তম পোশাক পরিধান করা

সহীহ বুখারীতে ‘ঈদ ও তার জন্য সাজসজ্জা গ্রহণ’-এ বর্ণিত আষারে আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন, একদা উমার (রাঃ) একটি মোটা রেশমের তৈরী জুববা বাজারে বিক্রয় হতে দেখে তিনি তা নিয়ে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি এটা ক্রয় করে নিন। এটি ঈদ ও বহিরাগত রাজ-প্রতিনিধিদের জন্য পরিধান করে সৌন্দর্য ধারণ করবেন।’ কিন্তু তিনি বললেন, ‘‘এটি তো তাদের লেবাস, যাদের (পরকালে) কোন অংশ নেই।’’[1]

ইবনে কুদামাহ বলেন, এই হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, উক্ত সময়ে সৌন্দর্য ধারণ করা তাঁদের নিকট প্রচলিত ছিল। [2] উক্ত ঘটনায় আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) সৌন্দর্য ধারণের ব্যাপারে আপত্তি জানালেন না। কিন্তু তা ক্রয় করতে আপত্তি জানালেন; কেননা তা ছিল রেশমের তৈরী।[3]

[1] (বুখারী ৯৪৮নং), [2] (আল-মুগনী ৩/২৫৭), [3] (দুরুসু রামাযান অকাফাত লিস্-সায়েমীন ৯৯পৃঃ)

৫. ঈদ্গাহে যাওয়ার সময় পায়ে হেঁটে যাওয়া, কোনো বাহন ব্যবহার না করা

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদব্রজেই ঈদগাহে যেতেন এবং পদব্রজেই ফিরে আসতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১২৯৫)

আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

ঈদের মাঠে পায়ে হেটে যাওয়া এবং যাওয়ার আগে কিছু খাওয়া সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিজী ৫৩০)

৬. ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতে বলতে যাওয়া

আল্লাহ বলেন,

আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। (সূরা বাকারা ১৮৫)

ঈদের তাকবীর শুরু হবে রামাযানের শেষ দিন সূর্যাস্তের পর থেকে। শেষ হবে ঈদের নামাযে ইমাম উপস্থিত হলেই। তাকবীরের পদ্ধতিঃ

اَللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ اَللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَللهِ الْحَمْدُ

উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ অতিমহান, তিনি ছাড়া সত্যিকার আর কোন মা‘বুদ নেই। আল্লাহ মহান আল্লাহ মহান আর সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁরই জন্য।

৭. যে পথে ঈদগাহে যাওয়া, আসার সময় অন্যপথে আসা

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে রাস্তা পরিবর্তন করতেন। (রাস্তা পরিবর্তনের মানে হচ্ছে, এক রাস্তায় যেতেন আর অন্য রাস্তায় ফিরতেন।) (হাদিস সম্ভার ১১২৮)

জাবির (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ঈদের দিন (বাড়ী ফেরার পথে) ভিন্ন পথে আসতেন। (সহীহ বুখারী ৯৮৬)

৮. ঈদের দিন সবসময় হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করা

মুসলিমদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ এই যে, তারা তাদের ঈদ পালন করে খুশী করবে এবং সেই খুশী প্রকাশের ফলে তারা সওয়াব-প্রাপ্তও হবে! কেননা, আনন্দের এই বহিঃপ্রকাশ দ্বীনের একটি প্রতীক। ঈদ হল, মুসলমানদের আপোসে সম্প্রীতি ও একে অন্যের জন্য মন-প্রাণ পরিষ্কার ও উদার করে দেওয়ার এক পরম অবকাশ।

আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় মুচকী হাসতেন। (সহীহ শামায়েলে তিরমিযী ১৬৯)

৯. উন্মুক্ত (মাঠে) স্থানে ঈদের সালাত পড়া

ঈদের নামাজ উন্মুক্ত মাঠে-ময়দানে নামাজ পড়া, এতে ঈদের আনন্দ পূর্ণতা পায়।

১০. একে অন্যকে সাক্ষাতে শুভেচ্ছা জানানো

ঈদে একে অপরকে মুবারকবাদ দেওয়া ঈদের অন্যতম আদব ও বৈশিষ্ট্য। এই মুবারকবাদ সাহাবা (রাযি.)-দের যুগে প্রচলিত ও পরিচিত ছিল। জুবাইর বিন নুফাইর বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর সাহাবাগণ ঈদের দিন একে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ হলে বলতেন,

তাক্বাববালাল্লাহু মিন্না অমিন্কুম

(ফাতহুল বারী ২/৫১৭, তামামুল মিন্নাহ, আল্লামা আলবানী ৩৫৪-৩৫৫পৃঃ)

১১. ঈদের সালাতের আগেই ফিতরা আদায় করা

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফারয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতের বের হবার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী ১৫০৩)

ভুল ধারণা – ঈদের সুন্নাহ মনে করা

নিচের কাজগুলোকে ঈদের সুন্নাহ মনে করে অনেকেই ভুল করে থাকেন:

  • মা-বাবার কবর জিয়ারত করা
  • কাধে কাধ মিলানো
  • নতুন পোশাক পরা

সবশেষে

এছাড়াও বর্তমান সময়ে দেখা যায় অনেক তরুণ-যুবকরা ঈদের দিন বিভিন্ন গান বাজাচ্ছে, ব্যান্ড-পার্টি করছে। বোনেরাও ঈদের দিন বিভিন্ন গায়েরে মাহরামদের সাথে মিশছে এবং পর্দা বিধান লঙ্ঘন করে বিনা প্রয়োজনে ঘুরাফেরা করছে। যেগুলো একদমই অনুচিত ও গুনাহের কাজ। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে সুস্থ ও সুন্দর ভাবে ঈদ উৎযাপন করার তৌফিক দান করুক। আমিন।

রেফারেন্স

Eid-ul-Fitr-Sunnah

শেয়ার:
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments