একনজরে...
১. রাস্তায় মানুষের কষ্ট হতে পারে এমন কিছু দেখলে রাস্তা থেকে সরিয়ে যথাস্থানে ফেলা/রাখা
আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈমানের শাখা সত্তরটিরও কিছু বেশি। অথবা ষাটটির কিছু বেশি। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই) এ কথা স্বীকার করা, আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা। [সহীহ মুসলিম ৫৯ (হাদীস একাডেমী)]
২. সিজদাতুস শুকুর বা শুকরিয়া সিজদাহ
মহানবী (ﷺ) কোন আনন্দদায়ক সংবাদ শুনলে অথবা শুভ সংবাদ পেলে আল্লাহ তাআলাকে শুকরিয়া জানানোর জন্য সিজদায় পতিত হতেন। [আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১৪৯৪নং]
৩. সালাতুত তওবা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি গুনাহ করার পর উত্তমরূপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে দু রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) পড়ে আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। [সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৯৫]
৪. সাদাকাহ করা
মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “এবং সাদাকা (যাকাত) বা দান খায়রাত) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। এমনিভাবে গভীর রাতে ব্যক্তির কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জু্র)ও গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়।” [মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২২০১৬]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমারা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ (নিজেকে রক্ষা কর) যদিও তা খেজুরের টুকরা দ্বারাও হয় (সামান্য বস্তু সদাকা করতে পারলেও তা কর)” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৬]
৫. অবসর সময়ে ইস্তেগফার পাঠ করা
وَاسْتَغْفِرِ اللهَ إِنَّ اللهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا‘‘আল্লাহর কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[সূরা আন্ নিসা ০৪:১০৬]
‘‘আমার অন্তর ক্ষণিক বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর আমি দিনে ১০০ বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই।’’[সহীহ মুসলিম : ৭০৩৩]
‘‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) ও তাওবাহ্ করে থাকি।’’ [সহীহুল বুখারী : ৬৩০৭]
৬. ওসিয়ত লিখে যাওয়া
كُتِبَ عَلَيْكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ ٱلْمَوْتُ إِن تَرَكَ خَيْرًا ٱلْوَصِيَّةُ لِلْوَٰلِدَيْنِ وَٱلْأَقْرَبِينَ بِٱلْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى ٱلْمُتَّقِينَ ١٨٠“তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে যে, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হবে, যদি সে কোনো সম্পদ রেখে যায়, তবে তা অসিয়ত করবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮০]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোনো মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয় যে, তার অসিয়তযোগ্য কিছু রয়েছে আর সে দু’রাত কাটাবে অথচ তার কাছে তার অসিয়ত লিখিত থাকবে না।”[সহীহ বুখারী, অসাইয়া, হাদীস নং ২৫৮৭]
৭. রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি, তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ আর দিনকে বানিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য। ’ (সুরা : নাবা, আয়াত : ৯-১১)
৮. এশার নামাজের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরি করে পড়া।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন, আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯)
৯. সম্মানিত ৪ মাসের সম্মান দেওয়া
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কাল আবর্তিত হয়েছে তার সেই অবস্থানের উপর যেভাবে আল্লাহ আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। বছর বার মাসের। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি পরপর যুল কাদা, যূল-হাজ্জাহ ও মুহাররম। আরেকটি মুদার গোত্রের রজব মাস, সেটি জুমাদা ও শাবানের মাঝখানে। [সহীহ বুখারী ৫২৫২ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)]
১০. মুহররম মাসে নফল রোজা
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হচ্ছে- আল্লাহর মাস ‘মুহররম’ এর রোজা। [সহিহ মুসলিম ১১৬৩ (আন্তর্জাতিক)]
১১. বৃষ্টি হলে খালি গায়ে বৃষ্টির পানি লাগানো
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ….. আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম এমন সময় বৃষ্টি নামল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাপড় খুলে দিলেন, ফলে এতে বৃষ্টির পানি পৌছল। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এরূপ কেন করলেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কেননা এটা মহান আল্লাহর নিকট থেকে আসার সময় খুবই অল্প। [সহীহ মুসলিম ১১৬৮ (হাদীস একাডেমী)]
১২. তাহিয়্যাতুল অযু ও তাহিয়্যাতুল মসজিদ এর দুই রাকাআত সালাত আদায় করা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ রেখে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। [সহীহ মুসলিম ৪৪১ (হাদীস একাডেমী)]
১৩. বিক্রিত মাল ফেরত নেওয়া
যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের (অনুরোধে তার) সাথে সম্পাদিত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করবে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। [সুনান আবূ দাউদ ৩৪৬০ (তাহকিককৃত)]
১৪. অপরিচিত লোককে সালাম দেওয়া
তুমি ক্ষুধার্তকে অন্ন দেবে, আর সালাম দিবে যাকে তুমি চেন আর যাকে চেন না। [বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৬২৩৬]
১৫. মেসওয়াক করা
মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ ও আল্লাহ্র সমেত্মাষ লাভের উপায়। [সহীহ; নাসাঈ (১/৫০), আহমাদ (৬/৪৭, ৬২)]
১৬. আজানের জবাব দেওয়া
’আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াজ্জিনকে শাহাদাতের শব্দ উচ্চারণ করতে শুনলে বলতেন, আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমিও অনুরূপ সাক্ষ্য দিচ্ছি। (আবূদাঊদ, সুনান ৫২৬নং) [আজানের জবাব নিয়ে আরো বিস্তারিত পড়ুন]
১৭. তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে। এটা তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব। অচিরেই তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ [সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৯]
১৮. সালাতুত দোহা বা চাশতের নামাজ পড়া
হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, “প্রত্যহ্ সকালে তোমাদের প্রত্যেক অস্থি-গ্রন্থির উপর (তরফ থেকে) দাতব্য সদকাহ্ রয়েছে; সুতরাং প্রত্যেক তাসবীহ্ হল সদকাহ্ প্রত্যেক তাহ্মীদ (আলহামদু লিল্লা-হ্ পাঠ) সদকাহ্, প্রত্যেক তাহ্লীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ্ পাঠ) সদকাহ্, প্রত্যেক তকবীর (আল্লা-হু আকবার পাঠ) সদকাহ্, সৎকাজের আদেশকরণ সদকাহ্, এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধকরণও সদকাহ্। আর এসব থেকে যথেষ্ট হবে চাশতের দুই রাকআত নামায।” [মুসলিম ৭২০ নং]
১৯. যেকোনো কাজ পরামর্শ করে করা
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যারা তাদের রবের আহবানে সাড়া দেয়, সালাত কায়েম করে, তাদের কার্যাবলী তাদের পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। [সূরা আশ-শুরা আয়াত ৩৮]
২০. বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নফল নামাজ
মহানবী (ﷺ) বলেন, “যখন তুমি তোমার ঘর থেকে বের হওয়ার সংকল্প করবে, তখন দুই রাকআত নামায পড়; তোমাকে বাহির পথের সকল মন্দ থেকে রক্ষা করবে। আবার যখন তুমি তোমার ঘরে প্রবেশ করবে তখনও দুই রাকআত নামায পড়; তোমাকে প্রবেশ পথের সকল মন্দ থেকে রক্ষা করবে।” [বাযযার, বায়হাকী শুআবুল ঈমান, জামে ৫০৫নং]
২১. বাচ্চাদেরকে সালাম দেওয়া
শিশু হলেও তাকে সালাম দেওয়া সুন্নাত এবং তা বিনয়ীর একটি নিদর্শন। আমাদের মহানবী (ﷺ) পথে চলাকালে ছোট শিশুদেরকে সালাম দিতেন। [সহীহ বুখারী ৬২৪৭ (তাওহীদ পাবলিকেশন)]
২২. ইফতার তাড়াতাড়ি করা এবং সাহরি দেরিতে করা
সময় হওয়ার সাথে সাথে শীঘ্র ইফতার করা নবুঅতের একটি আদর্শ। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তিনটি কাজ নবুয়তের আদর্শের অন্তর্ভুক্ত; জলদি ইফতার করা, দেরী করে (শেষ সময়ে) সেহরী খাওয়া এবং নামাযে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখা।’’ [ত্বাবারানী, মু’জাম, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/১০৫, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৩০৩৮নং]
২৩. দোয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করা
নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দোয়াই হলো ইবাদত। অতঃপর তিলাওয়াত করেন (অনুবাদঃ) ’’এবং তোমার প্রভু বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো’’ [সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৮]
২৪. ফজরের পর না ঘুমানো
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ’’হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন।’’ [আবু দাউদ হাদিস নাম্বারঃ ২৬০৬]
২৫. খাবার পড়ে গেলে তুলে পরিষ্কার করে খাওয়া
মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমাদের কারো খাবারের লোকমা হাত হতে (পাত্রের বাইরে) পড়ে গেলে (এবং তাতে ময়লা লেগে গেলে) তার ময়লা দূর করে সে যেন তা খেয়ে ফেলে এবং শয়তানের জন্য ছেড়ে না দেয়। খাবার শেষে সে যেন নিজের আঙ্গুলগুলো চেঁটে খায়। কারণ তোমরা জান না যে, তোমাদের কোন্ খাবারে বরকত নিহিত আছে।’’ [মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ১৪২১৮, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৩৪]
২৬. সফর থেকে আসার পর নফল নামাজ
মহানবী (ﷺ) বলেন, “যখন তুমি তোমার ঘর থেকে বের হওয়ার সংকল্প করবে, তখন দুই রাকআত নামায পড়; তোমাকে বাহির পথের সকল মন্দ থেকে রক্ষা করবে। আবার যখন তুমি তোমার ঘরে প্রবেশ করবে তখনও দুই রাকআত নামায পড়; তোমাকে প্রবেশ পথের সকল মন্দ থেকে রক্ষা করবে।” (বাযযার, বায়হাকী শুআবুল ঈমান, জামে ৫০৫নং)
২৭. মাঝে মাঝে খালি পায়ে হাটা
হাদিসে বর্ণিহ হয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মাঝেমধ্যে খালি পায়ে হাঁটার নির্দেশ করেছেন। [সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং : ৪১৬০; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং : ২৩৯৬৯]
২৮. মুচকি হাসি দেওয়া, মানুষের সাথে হাসি মুখে কথা বলা।
আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে অধিক মুচকি হাস্যকারী ব্যক্তি কাউকে দেখিনি। [সহীহ শামায়েলে তিরমিযী ১৬৮]
২৯. উপরে ও নিচে যাওয়ার সময় যিকির
৩০. আল্লাহর জন্য ভালোবাসা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অন্য এক ব্যক্তি সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। লোকটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অবশ্যই এ ব্যক্তিকে ভালোবাসি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি তাকে তোমার ভালোবাসার কথা জানিয়েছো? সে বললো, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি তাকে জানিয়ে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, সুতরাং সে ঐ ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললো, আমি আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। সে বললো, আমি আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। সে বললো, যাঁর উদ্দেশ্যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন তিনিও আপনাকে ভালোবাসুন। [সুনান আবূ দাউদ ৫১২৫ (তাহকিককৃত)]
৩১. ঘুমানোর সময় অযু করে ঘুমানো
“যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন অযু করে নাও, যেমনিভাবে তুমি সালাত আদায়ের জন্য অযু করে থাক।” [বুখারী ও মুসলিম]
৩২. কেবলার দিকে থুথু না ফালানো
আল্লাহর রাসুল (সঃ) বলেছেন, “কিবলার দিকে যে কফ ফেলে, তাঁর চেহারায় ঐ কফ থাকা অবস্থায় সে ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত করা হবে।” (বাযযার, ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিব্বান, সহিহ তারগিব ২৮১ নং)
৩৩. খাওয়া শেষে আঙুল চেটে খাওয়া
“তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, তখন সে যেন তার আঙুলসমূহ মুছে না ফেলে, যতক্ষণ না সে তা চেটে খায় অথবা কাউকে দিয়ে চাটিয়ে নেয়।”[বুখারী, হাদিস নং- ৫১৪০; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৪১৫]
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙুল ও খাওয়ার পাত্র চেটে খাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি বলেন: ‘তোমাদের জানা নেই, তোমাদের কোন্ খাবারের মধ্যে বরকত রয়েছে।”[মুসলিম, হাদিস নং- ৫৪২০]
৩৪. সাহরিতে খেজুর খাওয়া
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঈমানদার ব্যক্তির জন্য খেজুর দিয়ে সাহারী খাওয়া কতোই না উত্তম! [সুনান আবূ দাউদ ২৩৪৫ (তাহকিককৃত)]
৩৫. পানি পান করার সময় গ্লাসে বা পাত্রে নিশ্বাস না ফেলা
আবূ ক্বাতাদাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন পান করে, তখন সে যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। আর যখন শৌচাগারে যায় তখন তার পুরুষাঙ্গ যেন ডান হাত দিয়ে স্পর্শ না করে এবং ডান হাত দিয়ে যেন শৌচকার্য না করে। [সহীহ বুখারী ১৫৩ (তাওহীদ পাবলিকেশন)]
৩৬. আশ্চর্য হলে আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ বলা
৩৭. সন্ধ্যার সময় বা সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় ছোট বাচ্চাদের বাইরে যেতে না দেওয়া
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন রাতের আঁধার নেমে আসবে অথবা বলেছেন, যখন সন্ধ্যা হয়ে যাবে তখন তোমরা তোমাদের শিশুদেরকে আটকিয়ে রাখবে। কেননা এ সময় শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে। আর যখন রাতের কিছু অংশ অতিক্রান্ত হবে তখন তাদেরকে ছেড়ে দিতে পার। তোমরা ঘরের দরজা বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। [সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩০৪]
৩৮. জুমুআর রাত (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা) থেকে জুমুআর দিনের শেষ সময় (শুক্রবার সন্ধ্যা) পর্যন্ত বেশি বেশি দুরুদ পড়া
আওস ইবনু আওস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো জুমু’আহর দিন। এদিন আদম (আ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিলো, এদিনই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছিলো, এদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং এদিনই বিকট শব্দ করা হবে। কাজেই এদিন তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ করো। কারণ তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। আওস ইবনু আওস (রাঃ) বলেন, লোকজন প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহর রসূল! কি করে আমাদের দরূদ আপনার নিকট পেশ করা হবে? আপনি তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। বর্ণনাকারী আওস ইবনু আওস (রাঃ) বলেন, লোকেরা বুঝাতে চাচ্ছিল আপনার শরীর তো জরাজীর্ণ হয়ে মিশে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ মাটির জন্য নবী-রসূলগণের দেহকে হারাম করে দিয়েছেন। [সুনান আবূ দাউদ ১০৪৭ (তাহকিককৃত)]
৩৯. পেট ভরে না খাওয়াঃ পেটের তিনভাগের এক ভাগ খালি রেখে খাওয়া শেষ করা
ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাত পাকস্থলী ভর্তি করে কাফির খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে, আর একটিমাত্র পাকস্থলী ভর্তি করে মুমিন খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে। [তিরমিজি: ১৮১৮]
৪০. সন্তান জন্ম হওয়ার পর ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়া
‘‘আমি দেখলাম, ফাতেমা (রা) যখন হাসানকে জন্ম দিলেন তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসানের কানে নামাযের আযানের মত আযান দিলেন।’’[রেফারেন্স]
‘‘যদি কারো সন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং সে তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত দেয় তবে ‘উম্মুস সিবইয়ান’ (জিন) তার ক্ষতি করবে না।’’
৪১. দুধ পান করার পর দোয়া করা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের কেউ খাবার খাওয়ার সময় যেন বলেঃ ’’হে আল্লাহ! আমাদেরকে এর মধ্যে বরকত দিন এবং এর চেয়ে উত্তম খাবার দান করুন।’’ এবং দুধ পানের সময় যেন বলেঃ ’’হে আল্লাহ! আমাদেরকে এর মধ্যে বরকত দিন এবং এর চেয়ে আরো বৃদ্ধি করে দিন।’’ কেননা একমাত্র দুধই খাদ্য ও পানীয় উভয়ের কাজ দেয়। [সুনান আবূ দাউদ ৩৭৩০ (তাহকিককৃত)]
اَللَّهُمَّ بَاركْ لنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহি ওয়াজিদনা মিনহু।’
৪২. চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোজা রাখা
ইবনু মিলহান আল-কায়সী (রহ.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আইয়ামে বীয অর্থাৎ চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সওম পালনে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এগুলো সারা বছর সওম রাখার সমতুল্য। [সুনান আবূ দাউদ ২৪৪৯ (তাহকিককৃত)]
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের উক্ত আমলগুলো দৈনন্দিন জীবনে পালন করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
– লেখাটির দাওয়াহ প্রিন্ট-ভার্সন পিডিএফ ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
উক্ত লেখাটির কনসেপ্ট শায়েখ আহমাদুল্লাহ এর লেকচার থেকে সংগৃহীত।