একনজরে...
১) আয়াতুল কুরসী
আয়াতুল কুরসী ১ বার –
ফযীলতঃ
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত জ্বিন থেকে হেফাযতে থাকবে এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তা পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত জ্বিন থেকে হেফাযতে থাকবে। রেফারেন্সঃ বুখারীঃ ২৩১১
২) সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস
সূরা ইখলাস ৩ বার –
بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
(১) বলুন, তিনি আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয় (২) আল্লাহ্ হচ্ছেন ‘সামাদ’ (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী) (৩) তিনি কাউকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নি (৪) আর তাঁর সমতুল্য কেউই নেই (সূরা ইখলাসঃ ১-৪)
بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
অর্থঃ
(১) বল, ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের কাছে, (২) তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট
(১) বল, ‘আমি আশ্রয় চাই মানুষের রব, (২) মানুষের অধিপতি, (৩) মানুষের ইলাহ-এর কাছে, (৪) কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে, যে দ্রুত আত্মগোপন করে। (৫) যে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়। (৬) জিন ও মানুষ থেকে। (সূরা নাসঃ ১-৬)
ফযীলতঃ
মু’আয ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন:
“তুমি যদি সকালে ও সন্ধ্যায় তিন বার করে সূরা তিনটি (ইখলাস, ফালাক ও নাস) পাঠ করো তবে তা তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।” রেফারেন্স: হাসান। আবু দাউদঃ ৫০৮২
৩) সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া)
সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার (১ বার)-
আল্লা-হুম্মা, আনতা রাব্বী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, খালাক্বতানী, ওয়াআনা ‘আবদুকা, ওয়াআনা ‘আলা- ‘আহদিকা ওয়াওয়া‘অ্দিকা মাস তাত্বা‘অ্তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা- সনা’তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়াআবূউ (লাকা) বিযামবি। ফাগ্ফিরলী, ফাইন্নাহু লা- ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা- আনতা।
হে আল্লাহ্, আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো প্রকৃত মাবুদ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আমি আপনার অঙ্গিকার ও প্রতিজ্ঞার উপরে রয়েছি যতটুকু পেরেছি। আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমি যে কাজ করেছি তার অকল্যাণ থেকে। আমি আপনার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি আপনি আমাকে যত নিয়ামত দান করেছেন তা-সহ এবং আমি আপনার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি আমার পাপ-সহ। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, কারণ আপনি ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।
ফযীলতঃ
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন:
“এটি সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার বা শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার। যে ব্যক্তি এ দোয়ার অর্থের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রেখে দিনের বেলায় তা পাঠ করবে সে যদি সে দিন সন্ধ্যার আগে মৃত্যুবরণ করে, তবে সে জান্নাতী। আর যে ব্যক্তি এ দোয়া র অর্থে সুদৃঢ় একীন ও বিশ্বাস রেখে রাত্রে (সন্ধ্যায়) তা পাঠ করবে, সে যদি সে রাতেই সকালের আগে মৃত্যুবরণ করে, তবে সে জান্নাতী। রেফারেন্স: বুখারীঃ ৬৩০৬
৪) বিশেষ ফযীলতপূর্ণ দুআঃ
সকালে ৩ বার বলবে –
সুব’হা-নাল্লা-হি ওয়াবি’হামদিহী, ‘আদাদা খাল্ক্বিহী, ওয়ারিদ্বা- নাফ্সিহী, ওয়া ঝিনাতা ‘আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালিমাতিহী।
পবিত্রতা আল্লাহ্র এবং প্রশংসা তাঁরই, তাঁর সৃষ্টির সমসংখ্যক, তাঁর নিজের সন্তুষ্টি পরিমাণে, তাঁর আরশের ওজন পরিমাণে এবং তাঁর বাণীসমূহ লেখার কালি পরিমাণ (অগণিত অসংখ্য)
ফযীলতঃ
উম্মুল মুমিনীন জুআইরিয়্যা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফজরের সালাতের পরে তাকে তার সালাতের স্থানে যিক্র-রত অবস্থায় দেখে বেরিয়ে যান। এরপর তিনি অনেক বেলা হলে দুপুরের আগে ফিরে এসে দেখেন তিনি তখনও সে অবস্থায় তাসবিহ তাহলীলে রত রয়েছেন। তিনি বলেন: “তুমি কি আমার যাওয়ার সময় থেকে এ পর্যন্ত এভাবেই যিক্রে রত রয়েছ?” তিনি বললেন: “হ্যা।” তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেন: “আমি তোমার কাছ থেকে বেরিয়ে চারটি বাক্য তিন বার করে বলেছি (উপরের বাক্যগুলো)। তুমি সকাল থেকে এ পর্যন্ত যত কিছু বলেছো সবকিছু একত্রে যে সাওয়াব হবে, এ বাক্যগুলোর সাওয়াব একই পরিমাণ হবে। রেফারেন্স: সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৬৮০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২৬
৫) বিশেষ ফযীলতপূর্ণ দুআঃ
এই যিক্রটি মাসনূন যিক্রগুলোর মধ্যে অন্যতম-
লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া‘হ্দাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালা হুল ‘হামদু, ওয়াহুআ ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর
আল্লাহ্ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই, তিনি একক তার কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
ফযীলতঃ
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে লোক ১০০ বার এ দু’আটি পড়বে তাহলে,
১) দশটি গোলাম আযাদ করার সমান সাওয়াব তার হবে।
২) তার জন্য একশটি সাওয়াব লেখা হবে এবং আর একশটি গুনাহ মিটিয়ে ফেলা হবে।
৩) ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান হতে মাহফুজ থাকবে।
৪) কোন লোক তার চেয়ে উত্তম সাওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে ঐ দু’আটির ’আমল বেশি পরিমাণ করবে।
৫.যে লোক ১০ বার পড়বে সে ঐ লোকের সমান হয়ে যাবে, সে লোক ইসমাঈল (আঃ) -এর বংশ থেকে একটা গোলাম মুক্ত করে দিয়েছে। রেফারেন্স: সহীহ বুখারী ৩২৯৩ (তাওহীদ পাবলিকেশন)
সহিহ বুখারী ৬৪০৪
৬) সকাল-সন্ধ্যার যিক্র
১ বার –
ইয়া- ‘হাইউ ইয়া ক্বাইউমু, বিরা’হমাতিকা আসতাগীছু, আসলি’হ লী শা’নী- কুল্লাহু, ওয়া লা- তাকিলনী ইলা- নাফ্সী তারফাতা ‘আইন।
হে চিরঞ্জীব, হে মহারক্ষক ও অমুখাপেক্ষী তত্ত্বাবধায়ক, আপনার রহমতের ওসীলা দিয়ে উদ্ধার কামনা করি। আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন। আর আমাকে একটি মুহূর্তের জন্যও, চোখের পলকের জন্যও আমার নিজের দায়িত্বে ছেড়ে দিবেন না।
ফযীলতঃ
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফাতেমা (রাঃ)-কে বলেন, “আমি ওসীয়ত করছি যে, তুমি সকালে ও সন্ধ্যায় এ কথা বলবে।” রেফারেন্স: হাসান। সিলসিলাতুল সহীহাঃ ২২৭
৭) সকাল-সন্ধ্যার যিক্র
৭ বার বলবে –
হাসবিয়াল্লা-হু, লা- ইলা-হা ইল্লা- হুয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়া হুয়া রাব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম
আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোনো প্রকৃত মাবুদ নেই, আমি তাঁরই উপর নির্ভর করেছি, তিনি মহান আরশের প্রভু।
ফযীলতঃ
আবু দারদা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় ৭ বার এ আয়াতটি পাঠ করবে আল্লাহ্ তার দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা ও সমস্যা মিটিয়ে দেবেন।” রেফারেন্স: ইবনুস সুন্নী ৭১;
সহিহ মাওকুফ (শু’আইব ও আরনাঊত্ব)।
৮) সকাল-সন্ধ্যার যিক্র
৩ বার বলবে –
রাদ্বীতু বিল্লা-হি রাব্বান, ওয়া বিল ইসলা-মি দীনান, ওয়া বিমু’হাম্মাদিন নাবিয়্যান
আমি সন্তুষ্ট-পরিতৃপ্ত আল্লাহ্কে প্রভু হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে নবী হিসেবে গ্রহণ করে।
ফযীলতঃ
যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার এই দুআ পড়বে, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন সন্তুষ্ট করে দেবেন।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ সাঈদ! যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব (প্রতিপালক) রূপে, ইসলামকে দ্বীনরপে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবীরূপে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট, তার জন্যে জান্নাত অবধারিত হয়ে গেল। রেফারেন্স: সহীহ মুসলিম ৪৭৭৩ (হাদীস একাডেমী) ; সহিহ লি গাইরিহি (শুয়াইব আল-আরনাঊত)। তাখরিজুল মুসনাদঃ ২৩১১২
৯) সকাল-সন্ধ্যার যিক্র
৩ বার বলবে –
আ’ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি, মিন শার্রি মা-খালাক্ব
আল্লাহ্র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।
ফযীলতঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর কাছে এসে বলে, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ), গত রাতে আমাকে একটি বিষাক্ত বিচ্ছু কামড় দিয়েছিল যাতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। তিনি বলেন, “যদি তুমি সন্ধ্যার সময় এ কথা (উপরের দোয়াটি) বলতে তাহলে তা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারত না।” রেফারেন্স: মুসলিমঃ ২৭০৮, ২৭০৯
১০) সকাল-সন্ধ্যার যিক্র
৩ বার বলবে –
বিসমিল্লা-হিল লাযী লা- ইয়াদুর্রু মা‘আসমিহী শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা- ফিস সামা-ই, ওয়াহুআস সামীউল ‘আলীম।
আল্লাহ্র নামে; যাঁর নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।
ফযীলতঃ
উসমান (রাঃ) বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, যদি কোনো বান্দা সকালে ও সন্ধ্যায় তিন বার করে এই দোয়াটি পাঠ করে তবে সে দিনে ও ঐ রাতে কোনো কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না।” রেফারেন্স: সহীহ। আবু দাউদঃ ৫০৮৮
১১) রাসূলাল্লাহ ﷺ এর উপর দরুদ
১০ বার দরুদ পাঠ –
আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আলী মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইব্রাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা ‘হামীদুম্ মাজীদ।
হে আল্লাহ্ আপনি মুহাম্মাদ (ﷺ) ও তাঁর পরিজনের উপর সালাত প্রেরণ করুন যেমন আপনি সালাত প্রদান করেছেন ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিজনের উপর, নিশ্চয় আপনি মহাপ্রশংসিত মহাসম্মানিত। এবং আপনি বরকত প্রদান করুন মুহাম্মাদের উপরে এবং মুহাম্মাদের পরিজনের উপরে যেমন আপনি বরকত প্রদান করেছেন ইবরাহীমের উপরে এবং ইবরাহীমের পরিজনের উপরে। নিশ্চয় আপনি মহাপ্রশংসিত মহা সম্মানিত।
ফযীলতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি সকালে দশ বার ও সন্ধ্যায় দশ বার আমার উপর দুরুদ পড়বে, সে কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত লাভ করবে।”আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ্ তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০টি পাপ মোচন করে দিবেন এবং ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন। রেফারেন্স: তাবারানী, সহীহ তারগীব ১/২৭৩
সোর্স: দোয়া ও রুকিয়াহ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD; দৈনন্দিনের সহস্রাধিক সুন্নাত (শাইখ খালিদ আল-হুসাইনান রহ.)