একনজরে...
০১) নিয়ত
রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি (রমযানের সাওম (রোযা) ব্যতীত) রাত্রে সাওমের নিয়্যত না করে তার সাওম (রোযা) পালন করা হবে না।সুনানে আন-নাসায়ী ২৩৩১
০২) চাঁদ দেখে সিয়াম
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সওম রাখবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফ্তার করবে। আর যদি আকাশ মেঘলা থাকে তবে সময় হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে।
০৩) সাহরী খাওয়া
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাহ্রী খাও, সাহ্রীতে বারাকাত রয়েছে।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাদের ও কিতাবীদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হ’ল সাহরি খাওয়া।
০৪) সাহরীর খাবার
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের জন্য সাহরীর উত্তম খাবার হলো খেজুর।
০৫) ইফতার
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যতদিন মানুষ বিলম্ব না করে ইফত্বার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।
০৬) ইফতারের খাবার
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাগরিবের) নামায আদায়ের পূর্বেই কয়েকটা তাজা খেজুর দ্বারা ইফ্তার করতেন। তিনি তাজা খেজুর না পেলে কয়েকটা শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন আর শুকনো খেজুরও না পেলে তবে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।
০৭) কাউকে ইফতার করানো
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন রোযা পালনকারীকে যে লোক ইফতার করায় সে লোকের জন্যও রোযা পালনকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে। কিন্তু এর ফলে রোযা পালনকারীর সাওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।
০৮) সময়ের আগেই ইফতার করার শাস্তি
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম; এমন সময় (স্বপ্নে) আমার নিকট দুই ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। তাঁরা আমার উভয় বাহুর ঊর্ধ্বাংশে ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ের নিকট উপস্থিত করলেন এবং বললেন, ‘আপনি এই পাহাড়ে চড়ুন।’ আমি বললাম, ‘এ পাহাড়ে চড়তে আমি অক্ষম।’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা আপনার জন্য চড়া সহজ করে দেব।’ সুতরাং আমি চড়ে গেলাম। অবশেষে যখন পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে পৌঁছলাম তখন বেশ কিছু চিৎকার-ধ্বনি শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘এ চিৎকার-ধ্বনি কাদের?’ তাঁরা বললেন, ‘এ হল জাহান্নামবাসীদের চীৎকার-ধ্বনি।’ পুনরায় তাঁরা আমাকে নিয়ে চলতে লাগলেন। হঠাৎ দেখলাম একদল লোক তাদের পায়ের গোড়ালির উপর মোটা শিরায় (বাঁধা অবস্থায়) লটকানো আছে, তাদের কশগুলো কেটে ও ছিঁড়ে আছে এবং কশবেয়ে রক্তও ঝরছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি বললাম, ‘ওরা কারা?’ তাঁরা বললেন, ‘ওরা হল তারা; যারা সময় হওয়ার পূর্বে-পূর্বেই ইফতার করে নিত—।” (ইবনে খুযাইমাহ ১৯৮৬, ইবনে হিব্বান ৭৪৯১, হাকেম ১৫৬৮, সহীহ তারগীব ১০০৫, ২৩৯৩)
০৯) ভুলে খেয়ে নিলে বা পান করলে
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সিয়াম অবস্থায় ভুলে কিছু খেয়েছে বা পান করেছে সে যেন তার সিয়াম পূর্ণ করে। কেননা আল্লাহ্ই তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন।
১০) রমযানে অধিক পরিমাণ দান সদকা করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমাযানে জিবরাঈল (আঃ) যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমাযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল তাঁর সঙ্গে একবার সাক্ষাত করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরাঈল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।
১১) গীবাত, মিথ্যা, গালিগালাজ, অপবাদ, অভিসম্পাত ইত্যাদি কাজ পরিহার করা
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কত রোযাদার আছে যাদের রোযার বিনিময়ে ক্ষুধা ছাড়া আর কিছুই জোটে না। কত সলাত আদায়কারী আছে যাদের রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছুই জোটে না।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অন্যায় কথাবার্তা (গীবাত, মিথ্যা, গালিগালাজ, অপবাদ, অভিসম্পাত ইত্যাদি) ও কাজ যে লোক (রোযা থাকা অবস্থায়) ছেড়ে না দেয়, সে লোকের পানাহার ত্যাগে আল্লাহ্ তা’আলার কোন প্রয়োজন নেই।
১২) ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হওয়া
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের সুগন্ধির চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ।
১৩) ইফতারের পরের দুআ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ইফতার করতেন, তখন এই দুআ বলতেন,
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ
যাহাবায যামা-উ অবতাল্লাতিল উরুক্বু অষাবাতাল আজরু ইন শা-আল্লাহ
অর্থাৎ, পিপাসা দূরীভূত হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল এবং ইন শাআল্লাহ সওয়াব সাব্যস্ত হল। (আবূ দাঊদ ২৩৫৯)
১৪) রমজান মাসে অধিক হারে কুরআন তেলাওয়াত করা ও কুরআন অধ্যয়ন করা
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম কল্যাণের কাজে ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, বিশেষভাবে রমাযান মাসে। (তাঁর দানশীলতার কোন সীমা ছিল না) কেননা, রমাযান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাত্রে জিব্রীল (আঃ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তিনি তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন…..
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রতি বছর জিব্রীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে একবার কুরআন মাজীদ শোনাতেন ও শুনতেন। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দু’বার শুনিয়েছেন…
১৫) বিবিধ
০১) দুই ঈদের দিন সিয়াম পালন করা নিষেধ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’দিন সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন – কুরবানীর ঈদের দিন আর ‘ঈদুল ফিত্রের দিন।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫৬২; সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯৯০
০২) রমজানের আগের দিন
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রমাযানের একদিন কিংবা দু’দিন পূর্বে তোমরা (নাফ্ল) সওম পালন করো না, তবে যে পূর্ব থেকেই এ সময়ের রোযায় অভ্যস্ত সে সওম পালন করতে পারে।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৪০৮; সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯১৪
০৩) জুমু’আর দিন সিয়াম পালন সম্পর্কে
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “জুমু’আর দিন কেউ যেন সিয়াম পালন না করে। কিন্তু যদি কেউ জুমু’আর দিনের আগে বা পরে একদিন সিয়াম পালন করে তাহলে সে জুমু’আর দিন সিয়াম পালন করতে পারে।”
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫৭৩; সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯৮৫
০৪) শনিবার দিন সিয়াম পালন সম্পর্কে
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের উপর ফরযকৃত রোযা ছাড়া তোমরা শনিবারে আর অন্য কোন রোযা পালন করো না। আঙ্গুরের লতার বাকল বা গাছের ডাল ছাড়া তোমাদের কেউ যদি আর কিছু না পায় (সেদিনের আহারের জন্য) তবে সে যেন তাই চিবিয়ে নেয় (রোযা ভাঙ্গার জন্য)।
জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৭৪৪
০৫) আশুরার দুই রোজা
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে (এ হাদীসটিও) বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, যে সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আশূরার দিন সওম রেখেছেন; আর সাহাবীগণকেও রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সাহাবীগণ আরয করেন, হে আল্লাহর রসূল! এদিন তো ঐদিন, যেটি ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ! (আর যেহেতু ইয়াহূদী-খ্রিষ্টানদের আমরা বিরোধিতা করি, তাই আমরা সওম রেখে তো এ দিনের গুরুত্ব প্রদানের ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করছি)। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি আমি আগামী বছর জীবিত থাকি, তাহলে অবশ্য অবশ্যই নয় তারিখেও সওম রাখবো।
মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ২০৪১
০৬) টানা সিয়াম পালন সম্পর্কে
রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সারা জীবন সাওম (রোযা) পালন করে তার সাওম (রোযা) পালন হবে না।
[কেননা দু’ঈদ এবং আইয়াম-ই তাশরীকে সাওম (রোযা) পালন করা হারাম।]
সুনান আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৩৭৩