যিকির (ذكر) শব্দের অর্থ স্মরণ বা উল্লেখ করা। ইসলামী পরিভাষায়, যিকির বলতে আল্লাহর নাম, গুণাবলি ও প্রশংসা স্মরণ করা, তাঁর নির্দেশ মেনে চলা এবং তাঁর প্রশংসা মুখে ও অন্তরে পাঠ করা বোঝায়।
অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক যেকোন বিষয় নিয়ে মনে মনে চিন্তা করা; মুখে প্রকাশ করা এবং কাজে বাস্তবায়ন করা- সবকিছুই যিকর বা আল্লাহকে স্মরণ করার অন্তর্ভুক্ত।
যিকির প্রধানত দুই প্রকারঃ
- মৌখিক যিকির – মুখে আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত, দোয়া বা তাসবীহ পড়া।
- আমল দ্বারা যিকির – আল্লাহর আদেশ মেনে চলা ও তাঁর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা। যেমন – সালাত, সিয়াম, সদকা, বিভিন্ন নেক আমল।
সময়ভেদে যিকর দুই ধরনেরঃ
বিশেষ সময়ের যিকির
- বিশেষ ধরনের যে যিকির রয়েছে সেগুলো সময় সাপেক্ষে আমল করতে হয়। যেমন- ঘুমানোর দো‘আ, ঘুম থেকে জাগার দো‘আ, ভয় পেলে দো‘আ, চিন্তা দূর করার দো‘আ, বিপদের দো‘আ, ঋণ মুক্তির দো‘আ ইত্যাদি।
সাধারণ সময়ের যিকির
- এমন কিছু যিকির রয়েছে যা সব সময় পাঠ করা যায়। যতক্ষণ স্মরণে থাকে ততক্ষণ আমাদের এসব যিকির করা উচিত। যেমন – সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু।
যিকির করার পদ্ধতি
১) শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করা যায়।
আল্লাহ বলেন ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করে ও বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হ’তে রক্ষা কর’ । (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯১)
২) যিকির এর জন্য পবিত্রতা ও ওযু করা শর্ত নয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করতেন। শুধুমাত্র পেশাব-পায়খানারত অবস্থায় আল্লাহর যিকর করা যাবে না। এছাড়া সর্বাবস্থায় মুমিনের যিকির করা উচিত।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল ﷺ সর্বদা আল্লাহর যিকির করতেন’। (সহীহ মুসলিম ৩৭৩)
৩) যিকিরের শব্দগুলো নীরবে ও ভীতি সহকারে পড়তে হবে।
আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার প্রতিপালককে মনে মনে, ভীতি সহকারে, চুপে চুপে, নিম্নস্বরে সকাল-সন্ধ্যায় স্মরণ কর। আর তুমি গাফেল হয়ো না’ (সূরা আল আ’রাফ, আয়াত ২০৫)
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, আমরা এক সফরে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে ছিলাম। লোকেরা উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর বলছিল। রাসূল ﷺ বললেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের প্রতি রহম কর। তোমরা বধির কিংবা অনুপস্থিতকে ডাকছ না। তোমরা যাকে ডাকছ তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্ববিষয়ে অবগত। তোমরা যাকে ডাকছ তিনি তোমাদের সাথেই রয়েছেন। তিনি তোমাদের বাহনের ঘাড় অপেক্ষা অধিক নিকটবর্তী। (মিশকাত ২৩০৩)
৪) যে সমস্ত যিকিরের ক্ষেত্রে হাদীছে সংখ্যা উল্লেখ আছে যেমন- ৩ বার, ৭ বার, ৩৩-৩৪ বার, ১০০ বার বলা ইত্যাদি এগুলো আঙ্গুলে গণনা করা উচিত।
ইউসায়রা (রাঃ) বলেন, তিনি ছিলেন মুহাজির নারী, একদিন রাসূল ﷺ আমাদেরকে বলেন, তোমাদের ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস’ পড়া উচিত। এগুলো আঙ্গুলে গুনবে। কেননা ক্বিয়ামতের দিন এগুলোকে জিজ্ঞেস করা হবে এবং বলার শক্তি প্রদান করা হবে। (জামে’ আত-তিরমিজি ৩৫৮৩)
৫) যিকির হবে শুধু আল্লাহর নামে।
রাসূল ﷺ, তার সাহাবী বা অন্য কোন বুযুর্গের নামে যিকির করা শিরক। এজন্য ইয়া নবী, ইয়া রাসূল, ইয়া আলী উদ্দেশ্য করে ইত্যাদি বলে যিকর করা যাবে না।