কুরআনের গুরুত্ব ও ফযীলত

মূল পোস্ট: https://blog.deenelife.com/quran-benefits-significance/

একনজরে...

কুরআনের ফযীলত

১) কুরআন শেখা ও শেখানো

উসমান (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৫০২৭

২) প্রতি হরফ পাঠে ১০ গুন সাওয়াব

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সাওয়াব আছে। আর সাওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসেবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।
রেফারেন্সঃ সুনান আত তিরমিজী ২৯১০ 

৩) কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকারীর জন্য শাফা’আতকারী

আবূ উমামাহ আল বাহিলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা কুরআন পাঠ কর। কারণ কিয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্য সে শাফা’আতকারী হিসেবে আসবে। তোমরা দুটি উজ্জ্বল সূরাহ অর্থাৎ সূরাহ আল বাকারাহ এবং সূরাহ্ আ-লি ইমরান পড়। কিয়ামতের দিন এ দুটি সূরাহ এমনভাবে আসবে যেন তা দু খণ্ড মেঘ অথবা দু’টি ছায়াদানকারী অথবা দুই ঝাক উড়ন্ত পাখি যা তার পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সূরাহ আল বাকারাহ পাঠ কর। এ সূরাটিকে গ্রহণ করা বারাকাতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কাজ।…..
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ১৭৫৯ 
রোজা ও কোরআন কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব! আমি তাকে খাদ্য ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। নবীজি (সা.) বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’
রেফারেন্সঃ মুসনাদে আহমদ : ৬৬২৬; মুসতাদরাকে হাকিম : ২০৮০

৪) কুরআন পাঠ ও যিকরের জন্য একত্রিত হওয়ার মর্যাদা

আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর গৃহসমূহের কোন একটি গৃহে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং একে অপরের সাথে মিলে (কুরআন) অধ্যয়নে লিপ্ত থাকে তখন তাদের উপর শান্তিধারা অবতীর্ণ হয়। রহমত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে এবং ফেরেশতাগণ তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তা’আলা তার নিকটবর্তীদের (ফেরেশতাগণের) মধ্যে তাদের কথা আলোচনা করেন…
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ৬৭৪৬ 

৫) ফেরেশতাগণের আগমন

আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। একরাতে উসায়দ ইবনু হুযায়র তার ঘোড়ার আস্তাবলে কুরআন মাজীদ পাঠ করছিলেন। এমন সময় তার ঘোড়া লাফঝাপ দিতে শুরু করল। তিনি(কিছুক্ষণ পর)পুনরায় পাঠ করতে থাকলে ঘোড়াটিও পুনরায় লাফঝাপ দিতে শুরু করল।(কিছুক্ষণ পরে) তিনি আবার পাঠ করলেন এবারও ঘোড়াটি লাফ দিল। উসায়দ ইবনু হুযায়র বলেন- এতে আমি আশঙ্কা করলাম যে, ঘোড়াটি (শায়িত ছেলে) ইয়াহইয়াকে পদপিষ্ট করতে পারে। তাই আমি উঠে তার কাছে গেলাম। হঠাৎ আমার মাথার উপর সামিয়ানার মতো কিছু দেখতে পেলাম। তার ভিতরে অনেকগুলো প্রদীপের মতো জিনিস আলোকিত করে আছে। অতঃপর এগুলো উপরের দিকে শূন্যে উঠে গেল এবং আমি আর তা দেখতে পেলাম না।
তিনি বলেছেনঃ পরদিন সকালে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! গতকাল রাতে আমি আমার ঘোড়ার আস্তাবলে কুরআন মজীদ পাঠ করছিলাম। এমতাবস্থায় আমার ঘোড়টি হঠাৎ লাফঝাপ দিতে শুরু করল। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ইবনু হুযায়র! তুমি কুরআন পাঠ করতে থাকতে। ইবনু হুযায়র বলেন, আমি পুনরায় পাঠ করলাম। ঘোড়াটিও পুনরায় লাফঝাপ শুরু করে। আবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ইবনু হুযায়র! তুমি পাঠ করতে থাকতে। আমি পাঠ করে সমাপ্ত করলাম। ইয়াহইয়া ঘোড়াটির পাশেই ছিল। তাই ঘোড়াটি তাকে পদদলিত করে ফেলতে পারে আমি আশঙ্কা করলাম (এবং এগিয়ে গেলাম)।
তখন আমি মেঘপুঞ্জের মতো কিছু দেখতে পেলাম যার মধ্যে প্রদীপের মতো কোন জিনিস আলো দিচ্ছিল। এটি উপর দিকে উঠে গেল এমনকি তা আমার দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব শুনে বললেন। ওসব ছিল মালায়িকাহ (ফেরেশতাগণ)। তারা তোমার কুরআন শ্রবণ করছিল; তুমি যদি পড়তে থাকতে তাহলে ভোর পর্যন্ত তারা থাকত। আর লোকজন তাদেরকে দেখতে পেত। তারা লোকজনের দৃষ্টির আড়াল হত না।
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ১৭৪৪

৬) কুরআন শিক্ষায় অভিজ্ঞ ও যে তা ঠেকে ঠেকে অধ্যয়ন করে তাদের মর্যাদা

আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ঐসব মালাকগণের সাথে থাকবে যারা আল্লাহর অনুগত, মর্যাদাবান এবং লেখক। আর যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তার জন্য কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও বারবার পড়ে সে ব্যক্তির জন্য দু’টি পুরস্কার নির্দিষ্ট আছে।
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ১৭৪৭

৭) কিয়ামত দিবসে কুরআনের বাহককে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন কিয়ামত দিবসে হাযির হয়ে বলবে, হে আমার প্রভু! একে (কুরআনের বাহককে) অলংকার পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তাকে আরো পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। কাজেই তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি এক এক আয়াত পাঠ করতে থাক এবং উপরের দিকে উঠতে থাক। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সাওয়াব (মর্যাদা) বাড়ানো হবে।
রেফারেন্সঃ সুনান আত তিরমিজী ২৯১৫

৮) কুরআনের বাহক ঈর্ষা যোগ্য

সালিম তার পিতা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একমাত্র দু’টি বিষয়েই হিংসা করা যায়। একজন হচ্ছে, যাকে আল্লাহ্ কুরআন দান করেছেন, আর সে তা রাতদিন তিলাওয়াত করে, আরেকজন হল, যাকে আল্লাহ্ সম্পদ দিয়েছেন আর সে রাতদিন তা ব্যয় করে।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৭৫২৯

৯) সালাতে কুরআন তিলাওয়াত এবং কুরআন শিক্ষা করার ফযীলত

উক্‌বাহ ইবনু আমির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন। তখন আমরা সুফফাহ বা মসজিদের চত্বরে অবস্থান করছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কেউ চাও যে, প্রতিদিন “বুত্বহান” বা আকীকের বাজারে যাবে এবং সেখানে থেকে কোন পাপ বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ছাড়াই বড় কুঁজ বা চুঁটবিশিষ্ট দু’টি উটনী নিয়ে আসবে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা এরূপ চাই। তিনি বললেনঃ তাহলে কি তোমরা কেউ মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাবের দু’টি আয়াত শিক্ষা দিবে না কিংবা পাঠ করবে না? এটা তার জন্য ঐরুপ দু’টি উটনীর চেয়েও উত্তম। এরূপ তিনটি আয়াত তিনটি উটনীর চেয়ে উত্তম এবং চারটি আয়াত চারটি উটনীর চেয়ে উত্তম। আর অনুরূপ সমসংখ্যক উটনীর চেয়ে তত সংখ্যক আয়াত উত্তম।
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ১৭৫৮

১০) গোপনে কুরআন পাঠকারী গোপনে দান-খাইরাতকারীর সমতুল্য

উকবাহ ইবনু আমির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ প্রকাশ্যে কুরআন পাঠকারী প্রকাশ্যে দান-খাইরাতকারীর সমতুল্য এবং গোপনে কুরআন পাঠকারী গোপনে দান-খাইরাতকারীর সমতুল্য।
রেফারেন্সঃ সুনান আত তিরমিজী ২৯১৯

১১) রাতভর কিয়ামের সাওয়াব

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এক রাতে একশ’টি আয়াত পাঠ করবে, সে ব্যক্তির আমলনামায় ঐ রাত্রির কিয়াম (নামাযের) সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে।
রেফারেন্সঃ আহমাদ ১৬৯৫৮, নাসাঈর কুবরা ১০৫৫৩, ত্বাবারানী ১২৩৮, দারেমী ৩৪৫০, সিলসিলাহ সহীহাহ ৬৪৪

১২) যে ব্যক্তি (রাতের) সালাতে ১০০ আয়াত পাঠ করবে, তার নাম অনুুগত বান্দাদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতের সালাতে দশটি আয়াত তিলাওয়াত করবে, তার নাম গাফিলদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে না। আর যে ব্যক্তি (রাতের) সালাতে এক শত আয়াত পাঠ করবে, তার নাম অনুুগত বান্দাদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতে দাঁড়িয়ে এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করবে, তাকে অফুরন্ত পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে।
রেফারেন্সঃ সুনান আবু দাউদ ১৩৯৮

১৩) কুরআনের ধারক-বাহকের প্রতি সম্মান দেখানো মহান আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত

আবূ মূসা আল-আশ’আরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা, কুরআনের ধারক-বাহক ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান দেখানো মহান আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত।
রেফারেন্সঃ সুনান আবু দাউদ ৪৮৪৩

১৪) আল্লাহর এবং তাঁর রাসূলের ভালবাসা অর্জন

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে (অধিক) ভালবাসুক (অথবা আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাকে ভালবাসুন), সে যেন কুরআন দেখে পাঠ করে
রেফারেন্সঃ বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ২২১৯, সিলসিলাহ সহীহাহ ২৩৪২

১৫) কুরআন তিলাওয়াতকারীগণ আল্লাহর পরিজন

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কতক লোক আল্লাহ্‌র পরিজন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তারা কারা? তিনি বলেনঃ কুরআন তিলাওয়াতকারীগণ (কুরআন বুঝে পাঠকারী ও তদনুযায়ী আমলকারী ব্যক্তিরাই) আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।
রেফারেন্সঃ সুনান ইবন মাজাহ ২১৫

 কুরআনের গুরুত্ব

১) অন্যের নিকট থেকে তিলাওয়াত শোনা

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ’’আমার কাছে কুরআন পাঠ কর।’’ ’আবদুল্লাহ্ বললেন, আমি আপনার কাছে কুরআন পাঠ করব; অথচ আপনার ওপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন, আমি অন্যের নিকট থেকে তা শুনতে ভালবাসি।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৫০৪৯

২) কুরআন শোনা ও শোনানো

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রতি বছর জিব্রীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে একবার কুরআন মাজীদ শোনাতেন ও শুনতেন। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দু’বার শুনিয়েছেন…
রেফারেন্সঃ সহিহ বুখারী ৪৯৯৮

৩) রমজানে কুরআন পাঠ

ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম কল্যাণের কাজে ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, বিশেষভাবে রমাযান মাসে। (তাঁর দানশীলতার কোন সীমা ছিল না) কেননা, রমাযান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাত্রে জিব্রীল (আঃ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তিনি তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। যখন জিব্রীল (আঃ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি কল্যাণের জন্য প্রবহমান বায়ুর চেয়েও বেশি দানশীল হতেন…..
রেফারেন্সঃ সহিহ বুখারী ৪৯৯৭

৪) কুরআন পাঠকারীর উদাহরণ/দৃষ্টান্ত

আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এ লেবুর মত যা সুস্বাদু এবং সুগন্ধযুক্ত। আর যে ব্যক্তি (মু’মিন) কুরআন পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন খেজুরের মত, যা সুগন্ধহীন, কিন্তু খেতে সুস্বাদু। আর ফাসিক-ফাজির ব্যক্তি যে কুরআন পাঠ করে, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে রায়হান জাতীয় লতার মত, যার সুগন্ধ আছে, কিন্তু খেতে বিস্বাদ। আর ঐ ফাসিক যে কুরআন একেবারেই পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত, যা খেতেও বিস্বাদ এবং যার কোন সুগন্ধও নেই।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৫০২০ (তাওহীদ পাবলিকেশন)

৫) কুরআনের সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে

রাসূল (সা.) বলেছেন এই কুরআন (কিয়ামতে) সুপারিশকারী; তার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে। (কুরআন) সত্যায়িত প্রতিবাদী। যে ব্যক্তি তাকে নিজ সামনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জান্নাতের প্রতি পথপ্রদর্শন করে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাকে পিছনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করবে।
রেফারেন্সঃ ইবনে হিব্বান ১২৪, সহীহ তারগীব ১৪২৩

৬) আল কুরআন হবে পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ

আবূ মালিক আল আশ’আরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক অংশ। আলহামদু লিল্লা-হ’ মিযানের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দিবে এবং “সুবহানাল্লা-হ ওয়াল হামদুলিল্লা-হ” আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দিবে। সালাত’ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। সাদাকা হচ্ছে দলীল। ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতির্ময়। আর “আল কুরআন’ হবে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ। বস্তুতঃ সকল মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে আমলের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার আমল দ্বারা সে নিজেকে (আল্লাহর আযাব থেকে) মুক্ত করে অথবা সে তার নিজের ধ্বংস সাধন করে।
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ৪২২

৭) কুরআন অস্বীকারকারী দুনিয়ায় লাঞ্ছিত এবং পরকালে রয়েছে আযাব

…তখন উমর (রাযিঃ) বললেনঃ তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা এ কিতাব দ্বারা অনেক জাতিকে মর্যাদায় উন্নীত করেন আর অন্যদের অবনত করেন। অর্থাৎ যারা এ কিতাবের অনুসারী হবে তারা দুনিয়ায় মর্যাদাবান এবং আখিরাতে জান্নাত লাভ করবে। আর যারা একে অস্বীকার করবে তারা দুনিয়ায় লাঞ্ছিত পরকালে জাহান্নামে পতিত হবে।
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ১৭৮২

৮) কুরআন গ্রহণ করে তা ছেড়ে দেয়ার শাস্তি

…গত রাতে আমার কাছে দু’জন আগন্তুক আসল। তারা আমাকে উঠাল। আর আমাকে বলল, চলুন। আমি তাদের সঙ্গে চললাম। আমরা কাত হয়ে শুয়ে থাকা এক লোকের কাছে আসলাম। দেখলাম, অন্য এক লোক তার নিকট পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে তার মাথায় পাথর নিক্ষেপ করছে। ফলে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। আর পাথর নিচে গিয়ে পড়ছে। এরপর আবার সে পাথরটি অনুসরণ করে তা আবার নিয়ে আসছে। ফিরে আসতে না আসতেই লোকটির মাথা আগের মত আবার ভাল হয়ে যায়। ফিরে এসে আবার তেমনি আচরণ করে, যা পূর্বে প্রথমবার করেছিল। তিনি বলেন, আমি তাদের (সাথীদ্বয়কে) বললাম, সুবহান্নাল্লাহ্! এরা কারা?……..
তারা আমাকে বলল, আচ্ছা! আমরা আপনাকে বলে দিচ্ছি। ঐ যে প্রথম ব্যক্তিকে যার কাছে আপনি পৌঁছেছিলেন, যার মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হচ্ছিল, সে হল ঐ ব্যক্তি যে কুরআন গ্রহণ করে তা ছেড়ে দিয়েছে। আর ফরজ সালাত ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকে।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৭০৪৭

৯) কুরআন বর্জনকারীদের বিপক্ষে রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহ তা‘আলার কাছে সাক্ষ্য দিবেন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলবেন,
 وَ قَالَ الرَّسُوۡلُ یٰرَبِّ اِنَّ قَوۡمِی اتَّخَذُوۡا هٰذَا الۡقُرۡاٰنَ مَهۡجُوۡرًا ﴿۳۰﴾
‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে।
সূরা ফুরকান ২৫:৩০
কুরআনকে যেভাবে চর্চা করা, মেনে চলা ও মর্যাদা দেয়া এবং বিশ্বাস করা উচিত উম্মাতের যারা তা করে না তাদের বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার কাছে বলবেন: হে আল্লাহ তা‘আলা! আমার এ জাতি কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে। তারা কুরআনকে বর্জন করেছে, কুরআনকে মেনে নেয়নি এবং তার যথার্থ মর্যাদা দেয়নি।

১০) কিতাবুল্লাহর ওয়াসিয়্যাত

ত্বলহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ ’আওফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কোন ওয়াসিয়্যাত করে গেছেন? তিনি বললেন, না। তখন আমি বললাম, যখন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কোন ওয়াসিয়্যাত করে যাননি, তখন কী করে মানুষের জন্য ওয়াসিয়্যাত করাকে (কুরআন মাজীদে) বাধ্যতামূলক করা হল এবং তাদেরকে এজন্য নির্দেশ দেয়া হল। জবাবে তিনি বললেন, তিনি [নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর কিতাব (অনুসরণ)-এর ওয়াসিয়্যাত করে গেছেন। 
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৫০২২

১১) আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত আকড়ে ধরে রাখা

নিশ্চয় আমি তোমাদের মাঝে এমন বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি- তোমরা যদি উহা আঁকড়ে ধরে থাক তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হল আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত।’’
রেফারেন্সঃ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৪০