একনজরে...
সূরা ফাতিহার বিশেষ ফযীলতসমূহ
০১) বান্দার সাথে আল্লাহর কথোপকথন
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ আমার এবং আমার বান্দার মাঝে আমি সালাতকে অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করে নিয়েছি এবং আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়। বান্দা যখন বলে, (সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য), আল্লাহ তা’আলা তখন বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে।
সে যখন বলে, (তিনি অতিশয় দয়ালু এবং করুণাময়); আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ বান্দা আমার প্রশংসা করেছে, গুণগান করেছে।
সে যখন বলে, (তিনি বিচার দিনের মালিক), তখন আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে আল্লাহ আরো বলেনঃ বান্দা তার সমস্ত কাজ আমার উপর সমর্পণ করেছে।
সে যখন বলে,(আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি) তখন আল্লাহ বলেন। এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। (এখন) আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়।
যখন বান্দা বলে (আমাদের সরল-সঠিক পথে পরিচালনা করুন। যেসব লোকদের আপনি নি’আমাত দান করেছেন, তাদের পথে নয় যাদের প্রতি আপনার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে; তখন আল্লাহ বলেনঃ এসবই আমার বান্দার জন্যে এবং আমার বান্দার জন্যে রয়েছে সে যা চায়।
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ৭৬৪ (হাদীস একাডেমী)
০২) বারবার পঠিতব্য সূরা
وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنٰکَ سَبۡعًا مِّنَ الۡمَثَانِیۡ وَ الۡقُرۡاٰنَ الۡعَظِیۡمَ
আর আমি তো তোমাকে দিয়েছি পুনঃপুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত ও মহান কুরআন।
রেফারেন্সঃ সূরা হিজর ১৫:৮৭
سبع مثاني (পুনঃপুনঃ পঠিতব্য সাতটি আয়াত) থেকে উদ্দেশ্য কি? এ সর্ম্পকে মুফাসসিরীনদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। এর উদ্দেশ্য সূরা ফাতেহা এটাই সঠিক। যেহেতু এটি সাত আয়াতবিশিষ্ট এবং তা প্রত্যেক নামাযে বার বার পাঠ করা হয়। (মাসানীর অর্থ একাধিকবার পড়া।) হাদীসেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। সুতরাং একটি হাদীসে নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ-লামীন। এটি সাবএ মাসানী ও কুরআন আযীম, যা আমাকে দেওয়া হয়েছে।’’ (বুখারীঃ তাফসীর সূরা হিজ্র) অন্য এক হাদীসে নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘উম্মুল কুরআনই হল সাবএ মাসানী ও কুরআনে আযীম।’’ (ঐ) সূরা ফাতেহা কুরআনের একটি অংশ, সেই জন্য সাথে সাথে কুরআন আযীমের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
~তাফসীরে আহসানুল বায়ান
০৩) মাহাত্ম্যপূর্ণ সূরা
আবূ সা’ঈদ ইবনু মু’আল্লা (রাঃ) বলেন রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মাসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে আমি কি তোমাকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরাহ শিক্ষা দেব না?
তিনি বললেন, সেটা হলঃ ’’আল হামদুলিল্লাহ রাব্বিল ’আলামীন’’। এটা পুনঃ পুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত এবং কুরআন আজীম যা আমাকে দেয়া হয়েছে।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৫০০৬ (তাওহীদ পাবলিকেশন)
০৪) পূর্ণ নূর যা আর কোনো কিতাবে নেই
একদিন জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসেছিলেন। সে সময় তিনি উপর দিক থেকে দরজা খোলার একটা প্রচণ্ড আওয়াজ শুনতে পেয়ে মাথা উঠিয়ে বললেনঃ এটি আসমানের একটি দরজা। আজকেই এটি খোলা হ’ল- ইতোপূর্বে আর কখনো খোলা হয়নি। আর এ দরজা দিয়ে একজন মালায়িকাহ পৃথিবীতে নেমে আসলেন। আজকের এ দিনের আগে আর কখনো তিনি পৃথিবীতে আসেননি। তারপর তিনি সালাম দিয়ে বললেনঃ আপনি আপনাকে দেয়া দু’টি নূর বা আলোর সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনার পূর্বে আর কোন নবীকে তা দেয়া হয়নি। আর ঐ দু’টি নূর হ’ল ফা-তিহাতুল কিতাব বা সূরাহ আল ফাতিহাহ এবং সূরাহ আল বাকারাহ-এর শেষাংশ। এর যে কোন হারফ আপনি পড়বেন তার মধ্যকার প্রার্থিত বিষয় আপনাকে দেয়া হবে।
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ১৭৬২ (হাদীস একাডেমী)
০৫) শিফা
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের কৃত সূরা ফাতিহার মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক সমর্থন করে বলেন:
তুমি কী করে জানলে এটি ঝাড়ফুঁকের সূরা?
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৫০০৭ (তাওহীদ পাবলিকেশন)
০৬) সালাত এর শুদ্ধতা
যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল অথচ তাতে উন্মুল কুরআন (সূরাহ ফা-তিহাহ্) পাঠ করেনি তার সালাত ত্রুটিপূর্ণ থেকে গেল, পূর্ণাঙ্গ হল না। এ কথাটা তিনবার বলেছেন।
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ৭৬৪ (হাদীস একাডেমী)
সূরা বাকারার বিশেষ ফযীলতসমূহ
০১) দুআ কবুল হওয়া
একজন ফেরেশতা আকাশ থেকে নেমে সালাম দিয়ে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেনঃ আপনি আপনাকে দেয়া দু’টি নূর বা আলোর সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনার পূর্বে আর কোন নবীকে তা দেয়া হয়নি। আর ঐ দু’টি নূর হ’ল ফা-তিহাতুল কিতাব বা সূরাহ আল ফাতিহাহ এবং সূরাহ আল বাকারাহ-এর শেষাংশ। এর যে কোন হারফ আপনি পড়বেন তার মধ্যকার প্রার্থিত বিষয় আপনাকে দেয়া হবে।
রেফারেন্সঃ মুসলিম ১৭৬২ | হাদীস একাডেমী
০২) শেষের দুই আয়াতের ফজিলত
নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি রাতে সূরাহ বাকারার শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৫০০৯ (তাওহীদ পাবলিকেশন)
০৩) শয়তান থেকে সুরক্ষা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আসমান-যামীন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছেন। সেই কিতাব হতে তিনি দুটি আয়াত নাযিল করছেন। সেই দু’টি আয়াতের মাধ্যমেই সূরা আল-বাকারা সমাপ্ত করেছেন। যে ঘরে তিন রাত এ দুটি আয়াত তিলাওয়াত করা হয় শাইতান সেই ঘরের নিকট আসতে পারে না।
রেফারেন্সঃ সুনান আত তিরমিজী ২৮৮২ (তাহকীককৃত)
০৪) বারাকা লাভ ও যাদু থেকে সুরক্ষা
তোমরা সূরাহ আল বাকারাহ পাঠ কর। এ সূরাটিকে গ্রহণ করা বারাকাতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কাজ। আর বাতিলের অনুসারীগণ এর মোকাবেলা করতে পারে না
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ১৭৫৯ (হাদীস একাডেমী)
০৫) কুরআনের চূড়া
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অবশ্যই প্রত্যেক বস্তুরই চূড়া আছে; আর কুরআনের চূড়া হল সূরা বাক্বারাহ।
রেফারেন্সঃ হাকেম ২০৬০, সিলসিলাহ সহীহাহ ৫৮৮
আয়াতুল কুরসীর ফযীলতসমূহ
০১) সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ আয়াত
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আবূল মুনযিরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে আবূল মুনযির আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ?তখন তিনি বললেন, اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ (আয়াতুল কুরসী)(এ আয়াতটি আমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ)। এ কথা শুনে তিনি আমার বুকের উপর হাত মেরে বললেনঃ হে আবূল মুনযির! তোমার জ্ঞানকে স্বাগতম।
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ১৭৭০ (হাদীস একাডেমী)
০২) শয়তান থেকে সুরক্ষা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমাযানে যাকাতের মাল হিফাজতের দায়িত্ব দিলেন। এক সময় এক ব্যক্তি এসে খাদ্য-সামগ্রী উঠিয়ে নেয়ার উপক্রম করল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে যাব। এরপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। তখন লোকটি বলল, যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন। এর কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন পাহারাদার নিযুক্ত করা হবে এবং ভোর পর্যন্ত শায়ত্বন আপনার কাছে আসতে পারবে না। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঘটনা শুনে) বললেন, (যে তোমার কাছে এসেছিল) সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে বড় মিথ্যাচারী শায়ত্বন।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৫০১০ (তাওহীদ পাবলিকেশন)
০৩) জান্নাত লাভ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পশ্চাতে ’আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে, সে ব্যক্তির জন্য তার মৃত্যু ছাড়া আর অন্য কিছু জান্নাত প্রবেশের পথে বাধা হবে না।
রেফারেন্সঃ (নাসাঈ কুবরা ৯৯২৮, ত্বাবারানী ৭৫৩২, সহীহুল জামে ৬৪৬৪)
সূরা আলে ইমরানের ফযীলতসমূহ
০১) কিয়ামতের দিন সুপারিশ
কিয়ামতের দিন কুরআন ও কুরআন অনুযায়ী যারা ’আমল করত তাদেরকে আনা হবে। সূরাহ আল বাকারাহ ও সূরাহ আ-লি ইমরান অগ্রভাগে থাকবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ দু’টি সম্পর্কে তিনটি উদাহরণ দিয়েছিলেন যা আমি কখনো ভুলিনি। তিনি বলেছিলেনঃ
এ সূরাহ দুটি দু খণ্ড ছায়াদানকারী মেঘের আকারে অথবা দু’টি কালো চাদরের মতো ছায়াদানকারী হিসেবে আসবে যার মধ্যখানে আলোর ঝলকানি অথবা সারিবদ্ধ দু’ ঝাক পাখীর আকারে আসবে এবং পাঠকারীদের পক্ষ নিয়ে যুক্তি দিতে থাকবে।
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ১৭৫৯ (হাদীস একাডেমী)
সূরা কাহাফ এর ফযীলতসমূহ
০১) দাজ্জাল থেকে সুরক্ষা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরাহ আল কাহফ এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনাহ থেকে নিরাপদ থাকবে।
রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম ১৭৬৮ (হাদীস একাডেমী)
০২) নূর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহফ পাঠ করে, সে ব্যক্তির জন্য দুই জুমআর মধ্যবর্তী কাল জ্যোতির্ময় হয়ে যায়।
রেফারেন্সঃ হাকেম, বাইহাক্বী, সহীহুল জামে’ ৬৪৭০
০৩) প্রশান্তি
এক ব্যক্তি ’সূরাহ কাহ্ফ’ তিলাওয়াত করছিলেন। তার ঘোড়াটি দু’টি রশি দিয়ে তার পাশে বাঁধা ছিল। তখন এক টুকরো মেঘ এসে তার উপর ছায়া দান করল। মেঘখন্ড ক্রমেই নিচের দিকে নেমে আসতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি ভয়ে লাফালাফি শুরু করে দিল। সকাল বেলা যখন লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উক্ত ঘটনার কথা ব্যক্ত করেন, তখন তিনি বললেন, এ ছিল আস্সাকিনা (প্রশান্তি), যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৫০১১ (তাওহীদ পাবলিকেশন)
সূরা হা মীম আস সাজদাহ এর ফযীলতসমূহ
০১) ঘুমের যিকির
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা আলিফ লাম-মীম তানয়ীল( সূরা হা মীম আস সাজদাহ) ও সূরা “তাবারাকাল্লায়ী বিয়াদিহিল মুলক” (সূরা মূলক)না পাঠ করে ঘুমাতেন না।
রেফারেন্সঃ সুনান আত তিরমিজী ২৮৯২ (তাহকীককৃত)
সূরা মূলক এর ফযীলতসমূহ
০১) সুপারিশ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআনে তিরিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরাহ রয়েছে। সূরাহটি তার পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে, শেষ পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। সূরাহটি হচ্ছে ’তাবারকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক।
রেফারেন্সঃ সুনান আবূ দাউদ ১৪০০ (তাহকিককৃত)
সূরা কাফিরুন এর ফযীলতসমূহ
০১) শিরক থেকে সুরক্ষা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ’’কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’’ সূরাটি পড়ে ঘুমাবে। কেননা তা শিরক থেকে মুক্তকারী।
রেফারেন্সঃ সুনান আবূ দাউদ ৫০৫৫ (তাহকিককৃত)
০২) ফজরের সুন্নত সালাতে তিলাওয়াত
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু’ রাক’আত (সুন্নাতে) ’কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’ এবং ’কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সূরাদ্বয় তিলাওয়াত করতেন।
রেফারেন্সঃ সুনান আবু দাউদ ১২৫৬
০৩) কুরআনের চার ভাগের এক ভাগ
যে ব্যক্তি “কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরূন” পাঠ করবে তাকে কুরআনের এক-চতুর্থাংশের সমান সওয়াব দেওয়া হবে
রেফারেন্সঃ সুনান আত তিরমিজী ২৮৯৩ (তাহকীককৃত)
সূরা ইখলাস এর ফযীলতসমূহ
০১) কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করা সাধ্যাতীত মনে কর? এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। এরপর তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে যে, এটা পারবে? তখন তিনি বললেন, ’’কুল হুআল্লাহ আহাদ’’ অর্থাৎ সূরাহ ইখ্লাস কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৫০১৫ (তাওহীদ পাবলিকেশন)
০২) আল্লাহর ভালোবাসা লাভ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে একটি মুজাহিদ দলের প্রধান করে অভিযানে পাঠালেন। সালাতে তিনি যখন তাঁর সাথীদের নিয়ে ইমামত করতেন, তখন ইখ্লাস সূরাটি দিয়ে সালাত শেষ করতেন। তারা যখন অভিযান থেকে ফিরে আসল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে ব্যাপারটি আলোচনা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাঁকেই জিজ্ঞেস করে কেন সে এ কাজটি করেছে? এরপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দিলেন, এ সূরাটির আল্লাহ্ তা’আলার গুণাবলী রয়েছে। এ জন্য সূরাটিতে পড়তে আমি ভালোবাসি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহ্ তাঁকে ভালবাসেন।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৭৩৭৫ (তাওহীদ পাবলিকেশন)
০৩) জান্নাত লাভ
কুবা মসজিদে আনসার সম্প্রদায়ের এক লোক ইমামতি করতেন। তিনি নামাযে সূরা আল-ফাতিহার পর কোন সূরা পাঠ করার ইচ্ছা করলে প্রথমে সূরা কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ পাঠ করতেন এবং এ সূরা শেষ করার পর এর সাথে অন্য সূরা পাঠ করতেন। তিনি প্রতি রাকাআতেই এরূপ করতেন।
রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে প্রতি রাকআতে এ সূরা পাঠ করতে কিসে উদ্বুদ্ধ করছে? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটি খুব ভালোবাসি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর প্রতি তোমার ভালোবাসাই তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
রেফারেন্সঃ সুনান আত তিরমিজী ২৯০১ (তাহকীককৃত)
০৪) জান্নাতে প্রাসাদ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ’ক্বুল হুঅল্লা-হু আহাদ’ শেষ পর্যন্ত ১০ বার পাঠ করবে, আল্লাহ সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে এক মহল নির্মাণ করবেন।
রেফারেন্সঃ (আহমাদ ১৫৬১০, প্রমুখ, সিসিলাহ সহীহাহ ৫৮৯)
০৫) ঘুমের যিকির
প্রতি রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সূরাহ ইখ্লাস, সূরাহ ফালাক ও সূরাহ নাস পাঠ করে দু’হাত একত্র করে হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তাঁর দেহের সম্মুখ ভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৫০১৭ (তাওহীদ পাবলিকেশন)
০৬) সকাল সন্ধ্যার যিকির
মু’আয ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু খুবাইব (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে আমাদের সালাত পড়ার জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বললেনঃ বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কি বলবো? তিনি বললেনঃ তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সূরা কুল হুয়াল্লাহু (সূরা ইখলাস), সূরা নাস ও ফালাক পড়বে; এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে।
রেফারেন্সঃ সুনান আবূ দাউদ ৫০৮২ (তাহকিককৃত)
সূরা ফালাক ও সূরা নাস এর ফযীলতসমূহ
০১) জ্বিন ও বদনজর থেকে সুরক্ষা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিন ও মানুষের বদনজর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। অতঃপর সূরা ফালাক ও সূরা নাস নাযিল হলে তিনি এ সূরা দু’টি গ্রহণ করেন এবং অন্যগুলো ত্যাগ করেন।
রেফারেন্সঃ সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫১১
০২) অসুস্থতা
যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়তেন তখন তিনি আশ্রয় প্রার্থনার দুই সূরাহ (ফালাক ও নাস) পাঠ করে নিজ দেহে ফুঁক দিতেন এবং স্বীয় হাত দ্বারা শরীর মাসাহ করতেন।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী ৪৪৩৯ (তাওহীদ পাবলিকেশন)
০৩) ঝাড়ফুঁক করার সূরা
” সূরা ফালাক – সূরা নাস এ দুটি হল মুআব্বিযাতান (ঝাড়-ফুঁকের সূরা) ”
রেফারেন্সঃ আহমাদ ১৫৪৪৮, ১৭২৯৭, নাসাঈ কুবরা ৭৮৪৭
০৪) প্রতি ওয়াক্ত সালাতের পর পঠিত সূরা
উকবাহ ইবনু আমির (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পর সূরা আন-নাস ও সূরা আল-ফালাক পাঠের আদেশ করেছেন।
রেফারেন্সঃ সুনান আত তিরমিজী ২৯০৩ (তাহকীককৃত)