একনজরে...
সম্মানিত মাস
নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুলম করো না, আর তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই কর যেমনিভাবে তারা সকলে তোমাদের সাথে লড়াই করে, আর জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন। (সূরা তওবা ৯:৩৬
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেন সেদিন যেভাবে যামানা ছিল তা আজও তেমনি আছে। বারমাসে এক বছর, তার মধ্যে চার মাস পবিত্র। যার তিন মাস ধারাবাহিক যথা যিলকদ, যিলহজ্জ ও মুহাররাম আর মুযার গোত্রের রজব যা জামাদিউস সানী ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী। (সহিহ বুখারী ৪৬৬২)
আল্লাহর মাস এবং রমজানের পর রোজা রাখার জন্য উত্তম মাস
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
রমযানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের সওম এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রাতের সালাত। (সহীহ মুসলিম ২৬৪৫)
করণীয় আমল
গুনাহ থেকে দূরে থাকা
নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুলম করো না। (সূরা তওবা ৩৬)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ তুমি হারাম সমূহ হতে বিরত থাকলে লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় আবিদ বলে গণ্য হবে। (জামে’ আত-তিরমিজি ২৩০৫)
তওবা করা
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকটে বসা ছিলাম। এই সময় এক ব্যক্তি এসে তাঁকে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! রামাযান মাসের পর আর কোন মাসের রোযা পালনে আপনি আমাকে আদেশ করেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ রামাযান মাসের পর তুমি যদি আরো রোযা রাখতে ইচ্ছুক হও তবে মুহাররামের রোযা রাখ। যেহেতু এটা আল্লাহ তা’আলার মাস। এই মাসে এমন একটি দিবস আছে যেদিন আল্লাহ তা’আলা এক গোত্রের তাওবা কবুল করেছিলেন এবং তিনি আরোও অনেক গোত্রের তাওবাও এই দিনে কবুল করবেন। (জামে’ আত-তিরমিজি ৭৪১)
রোজা রাখা
সোমবার বৃহস্পতিবার রোজা রাখা
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার (আল্লাহ তা’আলার দরবারে) আমল পেশ করা হয়। সুতরাং আমার আমলসমূহ যেন রোযা পালনরত অবস্থায় পেশ করা হোক এটাই আমার পছন্দনীয়। (জামে’ আত-তিরমিজি ৭৪৭)তিন দিন সাওম পালন করা পুরো মাস সাওম পালনের সমান সওয়াব
আবূ যার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতি মাসে যে লোক তিন দিন রোযা পালন করে তা যেন সারা বছরই রোযা পালনের সমান। আল্লাহ্ তা’আলা এর সমর্থনে তার কিতাবে আয়াত অবতীর্ণ করেছেনঃ “কোন লোক যদি একটি সাওয়াবের কাজ করে তাহলে তার প্রতিদান হচ্ছে এর দশ গুণ” (সূরাঃ আন‘আম- ১৬০)। সুতরাং এক দিন দশ দিনের সমান। (জামে’ আত-তিরমিজি ৭৬২)হিজরী মাসের ১৩,১৪,১৫ সিয়াম পালন
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছেনঃ হে আবূ যার! তুমি প্রতি মাসে তিন দিন রোযা পালন করতে চাইলে তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখে তা পালন কর। (জামে’ আত-তিরমিজি ৭৬১)
আশুরার গুরুত্ব
ফিরাউনের কবল থেকে বনী ইসরাঈলের মুক্তি
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আসেন তখন দেখতে পেলেন ইয়াহূদীরা ‘আশুরা দিবসে সাওম পালন করে। তাদেরকে সাওম পালনের কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, এদিনই আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আঃ) ও বনী ইসরাঈলকে ফিরাউনের উপর বিজয় দিয়েছিলেন। তাই আমরা ঐ দিনের সম্মানে সাওম পালন করি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরা মূসা (আঃ) – এর বেশি নিকটবর্তী। এরপর তিনি সাওম পালনের নির্দেশ দিলেন। (সহিহ বুখারী ৩৯৪৩)
রমজানের রোজা ফরয হওয়ার আগেও রাসূলাল্লাহ ﷺ আশুরার রোজা রাখতেন
আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে কুরাইশগণ ‘আশূরার সাওম পালন করত এবং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- ও এ সাওম পালন করতেন। যখন তিনি মাদীনায় আগমন করেন তখনও এ সাওম পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমযানের সাওম ফরয করা হল তখন ‘আশূরার সওম ছেড়ে দেয়া হলো, যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না। (সহিহ বুখারী ২০০২)
রাসূলাল্লাহ ﷺ এর নির্দেশ
ইবনু আব্বাস রা বলেছেন, (মুহার্রামের) দশম তারিখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশূরার রোযা পালন করতে আদেশ করেছেন। (জামে’ আত-তিরমিজি ৭৫৫)
আবূ মূসা (রাযিঃ) বলেন, খায়বারের ইয়াহুদীরা আশূরার দিন সওম পালন করত, তারা এ দিনকে ঈদরূপে বরণ করত এবং তারা তাদের মহিলাদেরকে অলংকার ও উত্তম পোশাকে সুসজ্জিত করত। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও এ দিনে সওম পালন কর। (সহীহ মুসলিম ২৫৫১)
রাসূলাল্লাহ ﷺ গুরুত্ব দিয়ে এই দিনে রোজা রাখতেন
ইব্নু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে ‘আশূরার দিনের সাওমের উপরে অন্য কোন দিনের সাওমকে প্রাধান্য প্রদান করতে দেখিনি এবং এ মাস অর্থাৎ রমযান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখিনি)। (সহিহ বুখারী ২০০৬)
সাহাবায়ে কেরাম গুরুত্ব দিয়ে এই দিনে রোজা রাখতেন এবং ছোট শিশুদের রোজা রাখাতেন
রুবায়্যি’ বিনতু মু’আব্বিয (রাঃ) বলেন, ‘আশুরার সকালে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেনঃ যে ব্যক্তি সাওম পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার সাওম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সাওম পূর্ণ করে। তিনি (রুবায়্যি’) (রাঃ) বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন সাওম পালন করতাম এবং আমাদের শিশুদের সাওম পালন করাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত। (সহিহ বুখারী ১৯৬০)
এক বছরের (ছগীরা) গুনাহ মাফ
আশুরার সওম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফফারাহ হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম ২৬৩৬)
আশুরার রোজা রাখার নিয়ম
আশুরা মানে মুহাররাম মাসের ১০ তারিখ। আশুরার রোজা রাখার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো, আশুরার আগের দিন (৯ই মুহাররাম) ও আশুরার দিন (১০ই মুহাররাম) রোজা রাখা। এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি।
আশুরার আগের দিন মিলিয়ে রোজা রাখা
ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আশূরার দিন সিয়াম পালন করেন এবং লোকদেরকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন, তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়াহুদ এবং নাসারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকাল হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম ২৫৫৬)
কারবালার ঘটনা
মুহাররম মাসে হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাত একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়েছেন—চোখে অশ্রু আসতে পারে, হৃদয় ব্যথিত হতে পারে, কিন্তু মুখে এমন কিছু বলা যাবে না যা আল্লাহর অপছন্দ। তাই এ ঘটনায় অনৈসলামিক আচার-অনুষ্ঠান যেমন তাজিয়া, শোকগাঁথা, শোক মিছিল, রক্তপাত ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা মুসলমানদের কর্তব্য।
দুঃখজনকভাবে, এসব বিদ‘আতি কর্মকাণ্ডের কারণে মুহাররম মাসকে অনেকে অশুভ মনে করে এবং এ মাসে বিয়ের মতো বৈধ কাজ থেকেও বিরত থাকে, যা সম্পূর্ণ কুসংস্কার ও ইসলামের পরিপন্থী।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গন্ডে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে বং জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়। (সহিহ বুখারী ১২৯৪)
এ মাসের করণীয় মূল বিষয়গুলো হলো গুনাহ থেকে দূরে থাকা, তওবা- ইস্তেগফার, নফল রোযা এবং অন্যান্য নেক আমল এবং সব ধরনের কুসংস্কার বিদআতী কাজ থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নেক আমলগুলো কবুল করুন। আমীন
Leave a Comment