রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তা’আলা কোন বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন জিবরীল (আ.)-কে ডেকে বলেন যে, আমি অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাসী, তুমিও তাকে ভালোবাসো। রাবী বলেন, অতঃপর জিবরীল (আ.)-ও তাকে ভালোবাসতে থাকেন এবং আকাশে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ তা’আলা অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, তোমরাও তাকে ভালোবাসো। তখন আকাশমণ্ডলীর অধিবাসীরাও তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। অতঃপর সে বান্দার জন্য জমিনেও স্বীকৃতি স্থাপন করা হয়। (মিশকাত ৫০০৫)
একনজরে...
আল্লাহ যাদের ভালোবাসেন
১. মুত্তাকী
নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।(সূরা আলে ইমরান ৩:৭৬)
২. তওবাকারী
নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা বাকারা ২:২২২)
৩. মুহসিনীন
যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আল্লাহ মুহসিনীনদের ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৩৪)
৪. তাওয়াক্কুলকারী
নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৫৯)
৫. ধৈর্যশীল
এবং আল্লাহ ধৈর্যশীলগণকে ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৪৬)
৬. ন্যায়পরায়ন
নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় পরায়ণদেরকে ভালবাসেন। (সূরা ইউনুস ১০:৮)
৭. পবিত্রতা অর্জনকারী
আল্লাহ ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে। (সূরা আল বাকারা ২:২২২)
৮. মুজাহিদ
নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে যেন তারা সীসা ঢালা প্রাচীর। (সূরা সফ ৬১:৪)
৯. রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সত্য অনুসারী
বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (সূরা আলে ইমরান ৩:৩১)
১০. ইসলামের খেদমতে নিন্দুকের পরোয়া করেনা যে
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্য হতে কেউ তার দ্বীন হতে ফিরে গেলে সত্বর আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসেন আর তারাও তাঁকে ভালবাসবে, তারা মু’মিনদের প্রতি কোমল আর কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে, কোন নিন্দুকের নিন্দাকে তারা ভয় করবে না, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ- যাকে ইচ্ছে তিনি দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যের অধিকারী, সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়ীদা ৫:৫৪)
১১. ওয়াক্ত মত সালাত আদায়কারী
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন আমল আল্লাহ্র নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, ‘যথা সময়ে সালাত আদায় করা। (বুখারী ৫২৭)
১২. যে ব্যক্তি নিয়মিত আমল করে
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহ্র কাছে সর্বাধিক প্রিয় ‘আমল কি? তিনি বললেনঃ যে ‘আমল সদাসর্বদা নিয়মিত করা হয়। যদিও তা অল্প হয়। (বুখারী ৫৮৬১)
১৩. আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, আমার ভালবাসা সেই সমস্ত লোকের জন্য ওয়াজিব হয়েছে যারা আমার (সন্তুষ্টির) জন্য পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসে, আমারই জন্য একত্রে বসে, আমারই জন্য একে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং আমারই জন্য একে অন্যের জন্য খরচ করে। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক ১৭২১)
১৪. আল্লাহ তা‘আলার কাছে যে লোক দুআ করে
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু’আর চেয়ে কোন জিনিস বেশি সম্মানিত নয়। (তিরমিযী ৩৩৭০)
আল্লাহ তা‘আলার কাছে যে লোক চায় না, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর নাখোশ হন। (তিরমিযী ৩৩৭৩)
১৫. উপকারী ব্যক্তি
এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল, কোন মানুষ আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়? এবং কোন আমল আল্লাহ সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন? রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ সে যে মানুষের বেশি উপকার করে। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দের আমল হলো, কোনো মুসলিমকে আনন্দ দেওয়া কিংবা তার সমস্যার সমাধান করা বা ঋণ পরিশোধ করা বা তার ক্ষুধা নিবারণ করা। (তাবারানি ৬০২৬)
১৬. শক্তিশালী মুমিন
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সবল মুমিন শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়।(তবে) প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ আছে। (মুসলিম ৬৬৬৭)
১৭. আত্মনির্ভরশীল ও অপরিচিত ব্যক্তি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মুত্তাকী, আত্মনির্ভরশীল ও লোকালয় হতে নির্জনে বাসকারী বান্দাকে আল্লাহ তা’আলা ভালোবাসেন। (মুসলিম ৭৩২২)
১৮. যে ব্যক্তি নিখুঁতভাবে কাজ করে
আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন যে, যখন তোমাদের কেউ কিছু করে, তখন সে তা নিখুঁতভাবে করে। (সহীহ আল-জামি ১৮৮০)
১৯. তাসবীহ তাহমিদ পাঠকারী
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা জবানে সহজ, মীযানের পাল্লায় ভারী এবং করুণাময় আল্লাহ্র নিকট অতি প্রিয়। আর তা হচ্ছে –
উচ্চারণ: সুব্হা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুব্হা-নাল্লা-হিল ‘আযীম
অর্থ: আল্লাহ্র প্রশংসাসহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছি। মহান আল্লাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।
(বুখারী ৬৪০৬)
২০. আল্লাহর ভয়ে যার অশ্রু ঝরে
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দু’টি ফোঁটা ও দু’টি চিহ্নের চেয়ে বেশি প্রিয় আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আর কিছু নেই। আল্লাহ্ তা’আলার ভয়ে যে অশ্রুর ফোঁটা পরে, আল্লাহ্ তা’আলার পথে (জিহাদে) যে রক্তের ফোঁটা নির্গত হয় এবং আল্লাহ্ তা’আলার নির্ধারিত কোন ফরজ আদায় করতে গিয়ে যে চিহ্ন সৃষ্টি হয় (যেমন কপালে সিজদার চিহ্ন)।(তিরমিযী ১৬৬৯)
২১. নম্র ব্যক্তি
আল্লাহ তা’আলা নম্র ব্যবহারকারী। তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। তিনি নম্রতার দরুন এমন কিছু দান করেন যা কঠোরতার দরুন দান করেন না; আর অন্য কোন কিছুর দরুনও তা দান করেন না। (মুসলিম ৬৪৯৫)
২২. নিয়ামতের বহিঃপ্রকাশকারী
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর তার নিয়ামতের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন। তিনি তাকে ভালোবাসেন না যে দুঃখ ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।” (আল-মুজাম আল-কবীর ৫১৬৭)
২৩. যার মধ্যে ধীরস্থিরতা আছে
নবী (সাঃ) আবদুল কায়েস গোত্রের আশাজ (রাঃ)-কে বলেনঃ তোমার মধ্যে এমন দুইটি অভ্যাস আছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন। তা হলো সহিষ্ণুতা ও ধীরস্থিরতা। (আদাবুল মুফরাদ ৫৮৮)
২৪. যাহিদ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যখন কোন বান্দাহকে ভালবাসেন তাকে দুনিয়া হতে বাঁচিয়ে রাখেন, যেমন তোমাদের কেউ তার রোগীকে পানি হতে বাচিয়ে রাখে। (তিরমিযী ২০৩৬)
২৫. ব্যবসায় যে ব্যক্তি উদার
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তাগাদার ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা’আলা নম্রতা পছন্দ করেন। (তিরমিযী ১৩১৯)
আল্লাহর ভালবাসা লাভের দুআ 🤲🏻
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মার্ ঝুকনী ‘হুব্বাকা ওয়া ‘হুব্বা মান ইয়ান্ফা’উনী ‘হুব্বুহু ‘ইনদাকা
হে আল্লাহ্, আপনি আমাকে দান করুন আপনার ভালোবাসা এবং যার ভালোবাসা আপনার কাছে আমার উপকারে আসবে তার ভালোবাসা। (তিরমিযী ৩৪৯১)