একনজরে...
ইসলাম অর্থ কি?
ইসলাম আরবী শব্দ “সালাম” থেকে উদ্ভূত যার অর্থ শান্তি, এবং এটি আরবি শব্দ “সিলম” থেকেও উদ্ভূত যার অর্থ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) এর কাছে আপনার ইচ্ছাকে জমা দেওয়া। সংক্ষেপে, ইসলাম মানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)র কাছে আপনার ইচ্ছা জমা দিয়ে শান্তি অর্জন করা । অর্থাৎ
“ইসলাম মানে তাওহিদের স্বীকৃতি দিয়ে শান্তির জন্য আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ’’
সুরা আল ইমরানের ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
اِنَّ الدِّیۡنَ عِنۡدَ اللّٰهِ الۡاِسۡلَامُ
নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র ধর্ম
এবং ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যাবস্থার নাম।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তায়ালা সুরা আল মায়িদাহ এর ৩ নম্বর আয়াতে বলেন-
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিআমাত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবূল করে নিলাম।
এবং সুরা আল ইমরান এর ৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-
আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দ্বীন কবূল করা হবে না এবং আখেরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আমাদের দ্বীন হলো ইসলাম এবং ইসলামই হচ্ছে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটিঃ
১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।
২. সালাত কায়িম করা।
৩. যাকাত আদায় করা।
৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং
৫. রমাযানের সিয়াম পালন করা। (সহীহ বুখারী ০৮)
অর্থাৎ এই পাঁচটি জিনিসের উপর ইসলামের বুনিয়াদ রাখা হয়েছে।
মুসলিম কারা?
মুসলিম বা মুসলমান (مسلم অর্থ:আত্মসমর্পণ,অনুগত) হলো সেই লোক যে নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। অতএব,যে নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহ তায়ালার কাছে আত্মসমর্পণ করে শান্তি অর্জন করেছে তাকে মুসলিম বলে। সুতরাং একজন মুসলিম আল্লাহ তায়ালার কথামতোই জীবনযাপন করে এবং একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই ইবাদত করে।
নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহ তায়ালার কাছে আত্মসমর্পণ না করে অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান (পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যাবস্থা) না মেনে কেবল জন্মসুত্রে নামে মাত্র মুসলমান হওয়া সম্ভব, কিন্তু প্রকৃত মুসলিম হতে হলে ঈমান আনতে হবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এবং অনুসরণ করতে হবে তাঁর রাসূলকে এবং আল্লাহর কিতাব(ওহী) আল-কুরআনকে।
অর্থাৎ একমাত্র সজ্ঞানে আল্লাহর কাছে নিজের ইচ্ছার আত্মসমর্পণ এর মাধ্যমেই প্রকৃত মুসলমান হওয়া সম্ভব।
মুসলিমদের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সুরা ফুসসিলাত এর ৩৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন-
“কথায় ঐ ব্যক্তি থেকে কে বেশি উত্তম যে (মানুষকে) আল্লাহর দিকে আহবান করে, আর সৎ কাজ করে এবং বলে, ‘আমি (আল্লাহর প্রতি) অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত’।
আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
“আর যে নিজকে নির্বোধ বানিয়েছে, সে ছাড়া কে ইবরাহীমের আদর্শ থেকে বিমুখ হতে পারে? আর অবশ্যই আমি তাকে দুনিয়াতে বেছে নিয়েছি এবং নিশ্চয় সে আখিরাতে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে”
যখন তার রব তাকে বললেন, ‘তুমি আত্মসমর্পণ কর’। সে বলল, ‘আমি সকল সৃষ্টির রবের কাছে নিজকে সমর্পণ করলাম’
“হাঁ, যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমর্পন করেছে (ইসলাম গ্রহণ করেছে) এবং সে সৎকর্মশীলও বটে, তার জন্য তার পালনকর্তার কাছে পুরস্কার রয়েছে। তাদের ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না”
এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে-ই মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে ত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী ১০)
ইসলাম কি শুধুই শান্তির ধর্ম?
অধিকাংশ সময় আমরা মুসলিমদের বলতে শুনি, ইসলাম শান্তির ধর্ম। বিশেষকরে এই কথাটা বলেন ইউরোপের মুসলিমগণ যখন তারা অন্যান্যদের সামনে নিজ ধর্মের পক্ষে যুক্তি দেন। তারা বলেন: Islam is a religion of peace। শান্তির ধর্ম। তখন অমুসলিমগণ জবাবে বলেন: তোমরা কিভাবে ইসলামকে শান্তির ধর্ম বল অথচ কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এসেছে, তোমরা কাফেরদের সাথে লড়াই কর। তখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেন মুসলিমগণ কাউকে ধোঁকা দিচ্ছে কিংবা নিজ ধর্মের কোনকিছু তারা লুকানোর চেষ্টা করছে। অনেক সময় দেখা যায় তারাও প্রতিউত্তরে বলছে, তোমাদের ধর্মেও তো যুদ্ধের কথা আছে।
আমার ভাইয়েরা! আমাদের ধর্মে লজ্জা পাওয়ার মত কোন বিষয় নেই। বরঞ্চ আমাদের সর্বপ্রথম উচিত হলো নিজ ধর্মের বাস্তবতা সম্পর্কে স্পষ্ট ও ওয়াকিফহাল হওয়া। এ ব্যাপারে গর্ব করা। তবেই আমরা সন্দেহ ও লজ্জা না পেয়ে বরং পুরো পৃথিবীর সামনে গর্ব করতে পারবো।
যখন আপনি বলবেন: ইসলাম অমুক মূল্যবোধের ধর্ম। তখন সেই মূল্যবোধটি ইসলামের সকল শিক্ষায় উপস্থিত থাকা জরুরি, কোন আয়াত বা হাদীস যার বিরোধিতা করতে পারবেনা। তাই যদি আমরা একবাক্যেই ইসলামের পরিচয় দিতে চাই তাহলে কখনোই উচিত হবেনা একে শান্তির ধর্ম নামে অবহিত করা। কেননা ইসলাম অনেক সময়েই যুদ্ধের নির্দেশ দেয়।
হা তবে আমরা মানুষদের মাঝে এটা প্রচার করতে পারি যে, ইসলাম সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার ধর্ম। এই দুটি মূল্যবোধ ইসলামের প্রতিটি শিক্ষায়, প্রতিটি আয়াত হাদীস ও আইন প্রণয়নে বিদ্যমান। আপনি একটি আয়াতও দেখতে পাবেননা যা সত্যের কথা না বলে বাতিলের কথা বলছে অথবা ন্যায়পরায়ণতার পক্ষে না বলে যুলমের পক্ষে দাড়িয়েছে। পাওয়া অসম্ভব। সত্য ও ন্যায়পরায়ণতা এমন দুটি মূল্যবোধ যা ইসলামের সমস্ত নিয়ম কানুনে বিদ্যমান।
মহান আল্লাহ বলেন:
তিনিই আল্লাহ যিনি সত্য ও ইনসাফের মানদন্ড সহকারে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। (সূরা আশ-শূরা | আয়াত ১৭)
এ কুরআনকে আমি সত্যতা সহকারে নাযিল করেছি আর সত্যতা সহকারেই তা নাযিল হয়েছে। (আল-ইসরা | আয়াত ১০৫)
নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদন্ড নাযিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। (সূরা আল-হাদীদ | আয়াত ২৫)
অপরদিকে অনেক সময় কুফফারদের সাথে শান্তিস্থাপন যুলম ও বাতিলের কারণ হয়ে দাড়ায়। সে সময় সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার দাবী হলো, তাদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।
স্বাধীনতার বিষয়টিও এমন। এভাবে ঢালাওভাবে বলা উচিৎ হবেনা যে ইসলাম স্বাধীনতার ধর্ম। তখন প্রশ্ন আসবে যদি আদৌ তা স্বাধীনতার ধর্ম হয়ে থাকে তাহলে কেন উদাহারনস্বরূপ সমকামীতার স্বাধীনতায় তা বিশ্বাসী না? বরঞ্চ আমরা বলবো: এমন অনেক স্বাধীনতা রয়েছে যা বাতিল ও যুলমের নামান্তর। ইসলাম একে সমর্থন করেনা।
এভাবে ঢালাওভাবে বলা উচিৎ হবেনা যে ইসলাম সমতার ধর্ম। তখন প্রশ্ন আসবে: দায়িত্ব, কর্তব্য ও সামাজিক সকল বিষয়ে কেন এতে নারী পুরুষের সমঅধিকার নেই? বরঞ্চ আমরা বলবো: অনেক সময় সমঅধিকার বাতিল ও যুলমের কারণ হয়ে দাড়ায়।
আচ্ছা তাহলে প্রত্যেক বিষয়ে আমরা সত্য ও ন্যায়পরায়ণতা কিভাবে চিনতে পারবো? আমরা তা চিনতে পারবো আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য ও দাসত্বের মাধ্যমে। প্রবৃত্তি, ক্ষমতাশীল, প্রতিপত্তিশীল ও গণতন্ত্রের আড়ালে লুকানো গণমাধ্যমের অনুসরণের মাধ্যমে নয়।
এভাবে যখন আমরা ইসলামকে তার আসল আকৃতিতে চিনতে শিখবো, যখন তার প্রকৃত অবস্থা মানুষজনের নিকট উপস্থাপন করবো তখন কেউ কোন আয়াত কিংবা ইসলামী আইনকে সামনে নিয়ে আমাদের মুখোমুখি হলে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়বোনা। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ আমাদের সকল ভাইয়ের প্রতি যারা অমুসলিমদের সাথে চলাফেরা করেন। এই ব্যাপারগুলোতে তারা যেন স্পষ্ট থাকে। আর অমুসলিমদের সাথে আলোচনায় তাদের শিরোনাম যেন হয়, ইসলাম সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার ধর্ম।
আল্লাহ তায়ালা সত্য ও ন্যায়ের প্রতি মানুষের অন্তরে ও স্বভাবে আকর্ষণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। যে এটিকে কোনরকম পরিবর্তন ছাড়া গ্রহণ করে নিবে তাকে তো অভিনন্দন। আর যে তা প্রত্যাখ্যান করবে তা হবে তার বিকৃত মনোভাবের কারণে।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
নিশ্চয় তুমি যাকে ভালবাস তাকে তুমি হিদায়াত দিতে পারবে না; বরং আল্লাহই যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন। আর হিদায়াতপ্রাপ্তদের ব্যাপারে তিনি ভাল জানেন। (সূরা আল-কাসাস | আয়াত ৫৬)
কোনো যুগে প্রচলিত কোন শ্লোগানকে ইসলামের সাথে লাগিয়ে দেওয়া কখনোই সমীচীন নয়। আপনি দেখবেন, এর প্রচলনকারীগণও একে যথাযথভাবে পালন করেনা। যেমন যে সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শান্তি, স্বাধীনতা ও সমতার স্লোগান তোলে তারাও খোদ বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিজেরা এসব আদর্শ লঙ্ঘন করে।
অবশেষে ঘুরেফিরে আপনি শান্তি খুঁজে পাবেন ইসলামের সুরক্ষিত ওহীতে। যে শান্তি সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার চাদরে আবৃত।
আল্লাহই অধিক অবগত।
–ড. ইয়াদ আল কুনাইবী হাফিজাহুল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহ পড়ে খুব ভালো লাগলো।
জাজাকাল্লাহ!
ডাউনলোড হচ্ছে না যে pdf
সরাসরি ডাউনলোড হবেনা। প্রথমে Print এ ক্লিক করে তারপর পিডিএফ আকারে সেভ করা লাগবে।