11 Duties of Parents Towards Children

সন্তানের প্রতি পিতা মাতার ১১টি কর্তব্য

বিভাগ: বেসিক ইসলাম

সম্ভাব্য পড়ার সময়: ৫ মিনিট

বাবা মার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হল সন্তানকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা। একজন আদর্শ বাবা এবং মা অবশ্যই চাইবেন তাঁর ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন নেককার, ভালো মানুষ হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৭৪]

১. সন্তান বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে পাত্র/পাত্রীর দ্বীনদারিতা দেখা

মা বাবা হিসেবে সন্তানের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হল: সন্তান যেন ভালো মানুষ হয় সে আশায় জীবন সঙ্গীনি হিসেবে যাকে নির্বাচন করা হয় সে যেন আল্লাহ ভীরু হয়, মুত্তাকী হয়। মা দ্বীনদার হলে সন্তানসন্ততি দ্বীনদার হওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারী। সুতরাং তুমি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সহীহ বুখারী ৫০৯০]

মানুষের অর্থ, সামাজিক অবস্থা, রুপ লাবণ্য কোনটাই সারাজীবন উপভোগ্য থাকে না। মানুষের ব্যক্তিত্ব, আমল, তাকওয়া ইত্যাদি মানুষ সারাজীবন উপভোগ করে। অনাগত সন্তানদের কথা চিন্তা করে জীবন সঙ্গিনী নির্বাচন করা এবং সন্তান যেন ভালো পরিবেশে বড় হয়ে উঠে এর জন্য সেরকম দ্বীনি পরিবেশ নিশ্চিত করা। এটা সন্তানের অধিকার। সন্তান সন্ততি বেশিরভাগ নষ্ট হয় বাবা মার ত্রুটি থেকে। আর সন্তান যদি মানুষের মত মানুষ হয় সেটা সম্ভব হয় বাবা মার দায়িত্বশীলতার কারণে।

২. সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করা

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্মের সময় তার পার্শ্বদেশে শয়তান তার দুই আঙ্গুল দ্বারা খোঁচা মারে। [সহীহ বুখারী ৩২৮৬]

সন্তান উত্তম হওয়ার দোয়া: আদর্শ, সৎ-নিষ্ঠাবান ও উত্তম সন্তানের প্রত্যাশা সবার থাকে। তাই মা-বাবারও উচিত এমন সন্তানের জন্য দোয়া করা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,

رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ

হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নেককার সন্তান দিন। [সুরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১০০]

সন্তান জন্মের পর দোয়া: ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ হাসান এবং হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য নিম্নোক্ত দু‘আ পড়ে পানাহ চাইতেন আর বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ) ইসমাঈল ও ইসহাক (আঃ)-এর জন্য দু‘আ পড়ে পানাহ চাইতেন।

أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
উচ্চারণ: উ‘ইযুকুমা বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিওঁয়া হা-ম্মাহ্‌, ওয়ামিন কুল্লি আইনিল্লা-ম্মাহ্।

অর্থ: “আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি।” [সহীহ বুখারী ৩৩৭১]

দ্বীনদারিতে যত্নবান হওয়ার দোয়া: সন্তান যেন দ্বীনদার হয় এবং উদাসীন না হয়— সে জন্য দোয়া করতে হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,

رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلاَةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاء
উচ্চারণ : রাব্বিজ আলনি মুকিমাস সালাতি ওয়ামিন জুররিয়্যাতি, রাব্বানা ওয়া তাকাব্বাল দুয়া।

অর্থ : সে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামাজ আদায়কারী করুন এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল করুন। [সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪০]

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

তিন প্রকারের দুআ অবশ্যই মঞ্জুর করা হয়, তাতে কোনরকম সন্দেহ নেই। নির্যাতিত ব্যক্তির দুআ, মুসাফিরের দু’আ এবং সন্তানের প্রতি বাবার বদ-দুআ। [সুনান আত তিরমিজী ১৯০৫]

৩. জন্মের পর সন্তানের ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়া

নবজাতকের কানে আযান দেওয়া সুন্নাত। আবু রাফি (রা) বলেন:

‘‘আমি দেখলাম, ফাতেমা (রা) যখন হাসানকে জন্ম দিলেন তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসানের কানে নামাযের আযানের মত আযান দিলেন।’’ [১]

তবে বাম কানে একামত দেওয়ার বর্ণনাটি জাল পর্যায়ের। হাদীসটি নিম্নরূপ:

‘‘যদি কারো সন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং সে তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত দেয় তবে ‘উম্মুস সিবইয়ান’ (জিন) তার ক্ষতি করবে না।’’

হাদীসটি আবূ ইয়ালা মাউসিলী, ইবনুস সুন্নী প্রমুখ মুহাদ্দিস ইয়াহইয়া ইবনুল আলা রাযী থেকে মারওয়ান ইবন সালিম থেকে তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ উকাইলী থেকে ইমাম হুসাইন ইবন আলী (রা) থেকে রাসূলুল্লাহ থেকে হাদীসটি সংকলন করেছেন। আর ইয়াহইয়া ইবনুল আলা এবং তার উসতাদ মারওয়ান ইবন সালিম উভয়ই জালিয়াত ছিলেন। [২] [১] তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৯৭; আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/৩২৮; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৩/১৯৭। তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন ও আলবানী হাসান বলেছেন। [২] আবূ ইয়ালা, আল-মুসনাদ ১২/১৫০; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওম (শামিলা ৩.৫) ৩/১৯৮; বাইহাকী, শুআবুল ঈমান ৬/৩৯০; ইবন আদী, কামিল ৭/২৬৫৬; যাহাবী, মীযানুল ইতিদাল ৪/৩৯৭; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/৫৯; আলবানী, যায়ীফাহ ১/৪৯১।

৪. তাহনিক করা

ইমাম নববি রহ. বলেন,

সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে খেজুর দিয়ে তাহনিক করা সুন্নত। অর্থাৎ খেজুর চিবিয়ে নবজাতকের মুখের তালুতে আলতোভাবে মালিশ করা এবং তার মুখ খুলে দেওয়া, যাতে তার পেটে এর কিছু অংশ প্রবেশ করে। তিনি বলেন, কতক আলেম বলেছেন, খেজুর সম্ভব না হলে অন্য কোনো মিষ্টি দ্রব্য দিয়ে তাহনিক করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, সবার নিকটই তাহনিক করা মুস্তাহাব, আমার জানা মতে এ ব্যাপারে কেউ ভিন্ন মত পোষণ করেন নি। [1]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ তালহা ভূমিষ্ঠ হলে আমি তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের নিকট নিয়ে গেলাম। তিনি বলেন, তোমার সঙ্গে কি খেজুর আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর চিবালেন। অতঃপর তা বের করে বাচ্চার মুখে দিলেন। বাচ্চাটি জিব্বা দিয়ে চুসে ও ঠোটে লেগে থাকা অংশ চেটে খেতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এ দৃশ্য দেখে বলেন, দেখ, আনসারদের খেজুর কত প্রিয়! [2]

আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

আমার এক সন্তানের জন্ম হলে, আমি তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের নিকট নিয়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখেন ইবরাহিম। অতঃপর খেজুর দিয়ে তাহনিক করেন, তার জন্য বরকতের দো‘আ করেন এবং আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। এটা আবু মুসার বড় সন্তানের ঘটনা। [3]

[1] শরহে মুহাজ্জাব: ৮/৪২৪ [2] সহীহ মুসলিম [3] সহীহ বুখারী ও মুসলিম

৫. সুন্দর নাম রাখা

শিশুর জন্মের পর তার জন্য একটি সুন্দর ইসলামী নাম রাখা প্রত্যেক মুসলিম পিতা-মাতার কর্তব্য। ব্যক্তির নাম তার স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে বর্ণিত আছে। শাইখ বকর আবু যায়েদ বলেন,

“ঘটনাক্রমে দেখা যায় ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহর তা‘আলার হেকমতের দাবী। যে ব্যক্তির নামের অর্থে চপলতা রয়েছে তার চরিত্রেও চপলতা পাওয়া যায়। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রে গাম্ভীর্যতা পাওয়া যায়। খারাপ নামের অধিকারী লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে। ভাল নামের অধিকারী ব্যক্তির চরিত্রও ভাল হয়ে থাকে।” [1]

নবজাতকের নাম রাখার সময়কালের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি বর্ণনা রয়েছে। শিশুর জন্মের পরপরই তার নাম রাখা। শিশুর জন্মের তৃতীয় দিন তার নাম রাখা। শিশুর জন্মের সপ্তম দিন তার নাম রাখা। এর থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম এ বিষয়ে মুসলিমদেরকে অবকাশ দিয়েছে। যে কোনোটির উপর আমল করা যেতে পারে। [2] এমনকি কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা কোনো কোনো নবীর নাম তাঁদের জন্মের পূর্বে রেখেছেন মর্মে উল্লেখ আছে। [3] আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ আব্দুর রহমান। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

“তোমাদের নামসমূহের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।”[4]

এ নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল- এ নামদ্বয়ে আল্লাহর দাসত্বের স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামদ্বয়ের সাথে সম্বন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ (বান্দা বা দাস) শব্দটিকে সমন্ধিত করে নাম রাখাও উত্তম। [5] হাদিসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

“তোমরা আমার নামে নাম রাখ। আমার কুনিয়াতে (উপনামে) কুনিয়ত রেখো না।” [6]

[1]. বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/১০ ও ইবনুল কাইয়্যেম, তুহফাতুল মাওদুদ, পৃষ্ঠা-১/১২১। [2]. বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/১০। [3]. সূরা আলে ইমরানে ৩৯ নং আয়াতে ইয়াহইয়া (আঃ) এর জন্মের পূর্বেই তাঁর নাম উল্লেখ করে আল্লাহ তাঁর জন্মের সুসংবাদ দিয়েছেন। [4]. মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং- ৩৯৭৫। [5]. হাশিয়াতু ইবনে আবেদিন, পৃষ্ঠা- ৫/২৬৮ [6]. বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং- ৮৩৭; শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।

৬. সন্তানের আকিকা দেওয়া

আকিকার আভিধানিক অর্থ: আল্লাহর দরবারে নজরানা পেশ করা, শুকরিয়া আদায় করা, জানের সদকা দেওয়া ও আল্লাহর নি‘আমতের মোকাবেলায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। ইসলামী পরিভাষায় আকিকা হচ্ছে, নবজাতকের পক্ষ থেকে পশু জবেহ করা। ইমাম মালেক রহ. তার মুআত্তায় বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

যার সন্তান হয় সে যদি সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা করতে চায়, তবে তা করা উচিত। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে আকিকা কর, নাম রাখ ও চুল কর্তন কর। [1]

ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত,

ছেলের পক্ষ থেকে প্রতিদান হিসেবে দু’টি বকরি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। জন্মের সপ্তম দিন, সম্ভব না হলে ১৪তম দিন বা ২১তম দিন আকিকা করা সুন্নত। বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, সপ্তম দিন অথবা চতুর্দশ দিন অথবা একুশতম দিন আকিকা কর। [2]

[1] আহমদ ও সুনান গ্রন্থসমূহ, তিরমিযী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। [2] তিরমিযী

৭. সন্তান জন্মের পর সপ্তম দিন মাথা মুণ্ডন করা ও চুলের ওজন পরিমাণ রুপা সদকা করা

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তম দিন হাসান ও হুসাইনের চুল কাটার নির্দেশ দেন এবং চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সদকা করেন। ছেলে কিংবা মেয়ে হোক জন্মের সপ্তম দিন চুল কাটা সুন্নত। সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। অতএব, সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে আকিকা কর, তার চুল কাট ও তার নাম রাখ। [1]

নবজাতকের চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সদকা করা সুন্নত। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম হাসানের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা দিয়েছেন এবং বলেছেন, হে ফাতেমা, তার মাথা মুণ্ডন কর ও তার চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সদকা কর। [2]

হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন,

সব বর্ণনাতে রৌপ্যের কথাই এসেছে। (তালখিসুল হাবির) হ্যাঁ, অবশ্য কোনো কোনো বর্ণনাতে রৌপ্য বা স্বর্ণ সদকার কথাও বলা হয়েছে।

[1] আহমদ, তিরমিযী। সহীহ সূত্রে [2] তিরমিযী

৮. সন্তানকে ছোটবেলা থেকে ইসলামী শিক্ষায় বড় করে তোলা

  • দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া
  • কুরআন শিক্ষা দেওয়া
  • কুরআন বুঝে পড়ার গুরুত্ব বুঝানো
  • পরিবারের সদস্য সন্তান সন্ততিদের নিয়ে নিয়মিত তালিম করা
  • কুরআনের তাফসির, হাদিস ও ওলামায়ের কেরামের লিখিত বিভিন্ন জীবন পরিবর্তনকারী বই নিয়ে আলোচনা। সন্তানদের পড়তে দেওয়া ও তারা পড়ে সবাইকে শুনানো।

হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়। [সূরা তাহরীম আয়াত ৬]

  • উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া।
  • শিশু ও তার ভাইদের মধ্যে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করা:

রাসুলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ করো। (বুখারি, হাদিস : ২৫৮৭)

হজরত আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন,

তোমরা তোমাদের সন্তানদের সালাতের জন্য নির্দেশ দাও, যখন তারা সাত বছরে পৌঁছে। আর দশ বছর হলে তাকে প্রয়োজনে প্রহার করো, আর তাদের মাঝে বিছানা পৃথক করে দাও। (আবু দাউদ : ৪৯৫)।

৯. সন্তানকে ভরণপোষণ দেওয়া

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ

সাওয়াবের আশায় কোন মুসলিম যখন তার পরিববার-পরিজনের জন্য খরচ করে, তা তার সাদাকায় পরিগণিত হয়। [সহীহ বুখারী ৫৩৫১]

১০. সন্তানদের উপযুক্ত হলে বিয়ে দেওয়া

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী। [সূরা আন-নূর আয়াত ৩২]

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

তোমরা যে ব্যক্তির দীনদারী ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছ তোমাদের নিকট সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সাথে বিয়ে দাও। তা যদি না কর তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। [সুনান আত তিরমিজী ১০৮৪]

১১. সন্তানদের মধ্যে সমতা বজায় রাখা

নিজের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ ও সমতা রক্ষা করা মা-বাবার ওপর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এটি ইসলামের অনন্য বিধানও। প্রত্যেক মা-বাবা যেমন কামনা করেন তার সন্তানরা সবাই যেন তার সঙ্গে ভালো আচরণ করে, অনুরূপভাবে সন্তানরাও চায় তাদের মা-বাবা তাদের সবার সঙ্গেই ইনসাফ ও সমতা বজায় রাখবেন, তাদেরকে বৈষম্যের শিকার করবেন না। কেননা অসম আচরণে সন্তানদের অনুভূতিতে আঘাত লাগে, তখন সন্তানদের একে অন্যের প্রতি দুঃখ, ভালোবাসার স্থলে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক মনোভাব স্থান পায়, পরস্পরের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিবাদ ও অনৈক্য। তাই সর্বদা মা-বাবাকে সন্তানের মধ্যে আচরণে সমতা রক্ষা করে চলতে হবে। নোমান ইবনে বশির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

তোমাদের সন্তানদের মধ্যে সমান আচরণ করো; তোমাদের সন্তানদের সঙ্গে ইনসাফ করো। [আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৪৪]

সন্তানদের মধ্যে দান-দক্ষিনায় কাউকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“তোমার সন্তানেরা তোমার সাথে সমান সদাচরণ করুক তা কি তোমাকে আনন্দিত করবে না”? [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৩৭৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৪২]

সুতরাং সন্তানদের প্রতি দান-দক্ষিণায় সমতা রক্ষা করা অপরিহার্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উক্ত কর্তব্য সমূহ আমাদের সন্তানসন্ততিদের প্রতি পালন করার তৌফিক দান করুন, আমিন। ~শায়েখ আহমাদুল্লাহ এর লেকচার থেকে সংগৃহীত | পরিমার্জন ও সম্পাদনাঃ দ্বীনিলাইফ.কম

শেয়ার:
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments