Fajr Prayer

ফজরের সালাতের গুরুত্ব এবং ১০টি বিশেষ ফজিলত

বিভাগ: বেসিক ইসলাম, মুসলিম চরিত্র

সম্ভাব্য পড়ার সময়: ৫ মিনিট

ফজর হলো শয়তানের বিরুদ্ধে মুমিনের প্রথম বিজয়। ফজরের সালাতের গুরুত্ব আমাদের মুমিন-জীবনে অপরিসীম। অন্যান্য সালাত অপেক্ষা ফজর সালাতের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব বেশি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“এশা ও ফজর সালাতে কী ফযীলত রয়েছে মানুষ যদি তা জানত তবে উক্ত সালাতে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হত।” (সহীহ বুখারী ৬১৫)

ফজরের সালাতের জন্যে আরামের বিছানা ছেড়ে ওঠা আসলেই কষ্টের একটা কাজ। তবে কষ্টটা মুনাফিকদের জন্য। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর এবং ইশার সালাতের চেয়ে কষ্টকর আর কিছুই নেই।”(সহীহ বুখারী ৬৫৭)

হিজরতের পূর্বে মি’রাজ রজনীতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। এর পূর্বে দু’ ওয়াক্ত সালাত ফরয ছিল। সূর্যোদয়ের পূর্বে অর্থাৎ- ফজরের সালাত আর সূর্যাস্তের পূর্বে অর্থাৎ- ’আসরের সালাত ।

আল্লাহ তা’আলা ফজর সালাতের ব্যপারে বলেনঃ

সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ার সময় হতে রাত্রির গাঢ় অন্ধকার পর্যন্ত নামায প্রতিষ্ঠা কর, আর ফাজরের সলাতে কুরআন পাঠ (করার নীতি অবলম্বন কর), নিশ্চয়ই ফাজরের সলাতের কুরআন পাঠ (ফেরেশতাগণের) সরাসরি সাক্ষ্য হয়। (সূরা আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল) | আয়াতঃ ৭৮)

“সকাল ও সন্ধ্যায় তোমার প্রভুর প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা বর্ণনা করো” (সূরাহ্ আল গাফির/মু’মিন ৪০: ৫৫)

“অতএব তোমরা আল্লাহর তাসবীহ কর, যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে এবং সকালে উঠবে” (সূরা আর-রুম | আয়াত ১৭)

কাজেই তারা (মিথ্যা, উপহাসপূর্ণ ও অপমানজনক কথা) যা বলে তাতে তুমি ধৈর্য ধারণ কর আর সূর্যোদয়ের পূর্বে আর সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের মহিমা ও প্রশংসা ঘোষণা কর। (সূরা কাফ | আয়াত ৩৯)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ফজরের সময়ের গুরুত্ব বোঝাতে ফজরের সময় নিয়ে শপথ করেন, এমনকি ‘ফজর’ নামে কুরআনে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা পর্যন্ত নাযিল করেন।

যারা ফজরে জাগে তারা বারাকাহ লাভ করে। জীবনে, সময়ে, কাজে। আর যারা জাগতে পারে না, তারা বঞ্চিত হয় এই বারাকাহ থেকে। তাদের কাজে বারাকাহ থাকে না, সময়ে বারাকাহ থাকে না। সর্বোপরি জীবন থেকেও তাদের বারাকাহ হারিয়ে যায়। বারাকাহ যে কত বড় একটি নিআমত, তা যে লাভ করে, কেবল সে-ই উপলব্ধি করতে পারে। সাখর আল-গামিদী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “হে আল্লাহ! আমার উম্মাতের ভোর বেলার মধ্যে তাদেরকে বারকাত ও প্রাচুর্য দান করুন।” (তিরমিজী ১২১২)

ফজরের সালাতের ১০টি বিশেষ ফজিলত

মুনাফিকী থেকে মুক্তি

ফজরের সালাত মুমিন ও মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্যকারী। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিকদের জন্য ফজর ও ‘ইশার সালাত অপেক্ষা অধিক ভারী সালাত আর নেই। (সহীহ বুখারী। ৬৫৭)

আল্লাহর জিম্মায় (নিরাপত্তায়) থাকতে পারা

আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জুনদুব (ইবনু আবদুল্লাহ) আল কাসরীকে বলতে শুনেছি যে, রসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করল সে আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ করল। (সহীহ মুসলিম। ৬৫৭)

ফেরেশতাগনের প্রশংসা অর্জন

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

মালাকগণ পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; একদল দিনে, একদল রাতে। ‘আসর ও ফজরের সালাতে উভয় দল একত্র হন। অতঃপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি উঠে যান। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদের কোন্ অবস্থায় রেখে আসলে? অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক অবত। উত্তরে তাঁরা বলেন, আমরা তাদের সালাতে রেখে এসেছি, আর আমরা যখন তাদের নিকট গিয়েছিলাম তখনও তারা সালাত আদায়রত অবস্থায় ছিলেন। (সহীহ বুখারী। ৫৫৫)

জাহান্নাম থেকে মুক্তি

আবূ বকর ইবনু উমারাহ ইবনু রুআয়বাহ তার পিতা রুআয়বাহ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ এমন কোন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্যোদয়ের পূর্বের এবং সূর্যাস্তের পূর্বের সালাত অর্থাৎ ফাজর ও আসরের সালাত আদায় করে।(সহীহ মুসলিম। ৬৩৪)

জান্নাত লাভ

আবূ বকর ইবনু আবূ মূসা (রাযি.) হতে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুই শীতের (ফজর ও ’আসরের) সালাত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহীহ বুখারী। ৫৭৪)

ফজর আদায়ে উত্তম দিনযাপন

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঠ দেয়। প্রতি গিঠে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঠ খুলে যায়, পরে উযূ করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়, অতঃপর সালাত আদায় করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয়, উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলূষ কালিমা ও আলস্য সহকারে। (সহীহ বুখারী। ১১৪২)

কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নুরের সুসংবাদ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রাতের অন্ধকারে মাসজিদসমূহে যাতায়াতকারীদেরকে কিয়ামতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৮১)

সারারাত সালাত আদায়ের (ইবাদাতের) সওয়াব

আবদুর রহমান ইবনু আবূ ’আমরাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মাগরিবের সালাতের পর উসমান ইবনু আফফান মসজিদে এসে একাকী এক জায়গায় বসলেন। তখন আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বললেন- ভাতিজা, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জামা’আতের সাথে ইশার সালাত আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত সালাত আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে সালাত আদায় করল। (সহীহ মুসলিম। ৬৫৬) (তিরমিজী ২২১) (সুনান আবূ দাউদ ৫৫৫)

দুনিয়া ও তার সব কিছুর চেয়ে উত্তম যে সালাত

আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফজরের দু’ রাকাআত (সুন্নাত) সালাত দুনিয়া ও তার সব কিছুর থেকে উত্তম। (সহীহ মুসলিম। ৭২৫)

রিজিকে বরকত লাভ

সাখর আল-গামিদী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “হে আল্লাহ! আমার উম্মাতের ভোর বেলার মধ্যে তাদেরকে বারকাত ও প্রাচুর্য দান করুন।” (তিরমিজী ১২১২)

বিশেষ সতর্কতা

যে সালাত আদায় করা সম্ভব হয়নি এবং তা করার (সম্পাদনের) ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করা মুস্তাহাব। তাই কেউ যদি অনিচ্ছায় ফজরের সালাত বা অন্য ওয়াক্তের কোনো সালাত আদায় করতে না পারে তাহলে সে যেন ঘুম থেকে উঠা মাত্রই (স্মরণ হওয়া মাত্রই) তা আদায় করে নেয়।

আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

কেউ কোন সালাত আদায় করতে ভুলে গেলে যখন স্মরণ হবে তখনই যেন সে তা আদায় করে নেয়। এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন কাফফারাহ তাকে দিতে হবে না। (সহীহ মুসলিম ৬৮৪)

প্রসঙ্গত; উল্লেখ্য যে, ফজরের নামায জামাআতে পড়ার জন্য কয়েকটি জিনিস জরুরী:

  • আল্লাহর আযাবের ভয় এবং তার সওয়াবের লোভ মনের মাঝে স্থান দিতে হবে।
  • অবৈধ কাজে তো নয়ই; বরং বৈধ কাজেও বেশী রাত না জেগে আগে আগে ঘুমাতে হবে।
  • জামাআত ধরার পাক্কা এরাদা হতে হবে।
  • ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয় এমন অসীলা ব্যবহার করতে হবে; যেমন এলার্ম ঘড়ি, কোন সুহৃদ সাথী ইত্যাদি।

কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, দুনিয়ার কাজের জন্য ফজরের আগেও উঠতে মানুষ অসুবিধা বোধ করে না, অথচ যত অসুবিধা বোধ করে আল্লাহর কাজে যথা সময়ে জাগতে।

সুতরাং এমন সব উপায় ও অসীলা অবলম্বন করা উচিৎ, যাতে যথা সময়ে উঠে ফজরের নামায জামাআত সহকারে পড়া সহ্‌জ হয়। যেমন সকাল-সকাল ঘুমিয়ে পড়া, বেশী রাত না জাগা, কাউকে জাগিয়ে দিতে অনুরোধ করা, এলার্ম ঘড়ি ব্যবহার করা, ইত্যাদি। এত বেশী রাত জেগে কুরআন তেলাওয়াত বা কোন ইলমী আলোচনা করাও বৈধ নয়, যার ফলে ফজরের নামায ছুটে যাওয়ার ভয় থাকে।

শয়তানের ধোঁকায়, আমরা অনেকসময় মসজিদে জামা‘আ্তে সালাত আদায় করতে সময়মত পৌছাতে পারবো না ভেবে বাসায় সালাত আদায় করার মনস্থির করে ফেলি, যা একদম ই কাম্য নয়।

কেউ জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয়েও জামা‘আত না পেলেও মসজিদেই সালাত আদায় করে নিবে। কারণ;

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

কোন ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করে মসজিদে গিয়ে দেখতে পেল লোকেরা সালাত আদায় করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ তাকেও জামা’আতে শামিল হয়ে সালাত আদায়কারীদের সমান সাওয়াব দান করবেন। অথচ তাদের সাওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না। (সুনান আবূ দাউদ ৫৬৪)

এবং মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ارۡکَعُوۡا مَعَ الرّٰکِعِیۡنَ

‘তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর’ ( আল বাকারা ২/৪৩)

এখানে আল্লাহ তা‘আলা রুকূ দ্বারা সালাত বুঝিয়েছেন। কারণ রুকূ সালা্তের অন্যতম প্রধান রুকন। ‘রুকূকারীদের সাথে’ এ কথা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন যে, রুকূ একাকী হবে না। বরং রুকূকারীদের সাথে হ’তে হবে। আর এটি জামা‘আতে সালাত আদায় ব্যতীত সম্ভব নয়। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদী রুকূকারীদের সাথে রুকূ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, তোমরা মুমিনদের উত্তম ও সৎকর্মে তাদের সঙ্গী হয়ে যাও। তার মধ্যে বিশেষ ও পূর্ণাঙ্গ হ’ল সালাত’। (তাফসীরে ইবনু কাছীর ১/২৪৫-২৪৬)

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আযান শুনতে পেয়েও বিনা ওযরে মসজিদে আসে না তার সালাত সিদ্ধ হবে না’। রাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘ওযর’ হচ্ছে ভয় ও অসুস্থতা। (ইবনু মাজাহ হা/৭৯৩: ছহীহ তারগীব হা/৪২৬; মিশকাত হা/১০৭৭) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ﷺ) বলেন,‘যে ব্যক্তি সুস্থ ও অবসরে থাকা সত্ত্বেও আযান শুনে জামা‘আতে আসল না তার সালাত সিদ্ধ হবে না’।(হাকেম হা/৮৯৯; ছহীহ তারগীব হা/৪৩৪) এই হাদীছ স্পষ্ট করে দেয় যে, সুস্থ ব্যক্তির সালাত বাড়িতে সিদ্ধ হবে না। যদিও কেউ বাড়িতে একাকী সালাত আদায় করলে সালা্তের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে। তবে ওয়াজিব ত্যাগ করার কারণে গুনাহগার হবে।[শারহু সুনানে আবুদাউদ ৩/৪৪২]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেন, এশা ও ফজরের সালাত আদায় করা মুনাফিকদের জন্য সর্বাপেক্ষা কঠিন। তারা যদি জানত এ দুই সালা্তের মধ্যে কি (ছওয়াব) আছে, তাহ’লে তারা এ দুই সালা্তের জামা‘আতে হামাগুড়ি দিয়ে হ’লেও হাযির হ’ত। আমার মন চায়, আমি সালা্তের নির্দেশ দেই এবং ইক্বামত দেওয়া হবে। অতঃপর একজনকে নির্দেশ দেই যে লোকদের ইমামতি করবে। আর আমি কিছু লোককে নিয়ে জ্বালানী কাঠের বোঝাসহ বের হয়ে তাদের কাছে যাই, যারা সালা্তে (জামা‘আতে) উপস্থিত হয় না এবং তাদের ঘর-বাড়ীগুলি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই’।(বুখারী হা/৬৫৭; মুসলিম হা/৬৫১; মিশকাত হা/৬২৮, ৬২৯)

ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূল (ﷺ) মসজিদে আগমন করে মুছল্লীদের স্বল্পতা দেখে বললেন, আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি লোকদের জন্য কাউকে ইমাম নিযুক্ত করে বেরিয়ে যাই। অতঃপর যে জামা‘আতে সালাত আদায় না করে বাড়ীতে অবস্থান করছে তাকে জ্বালিয়ে দেই। তখন ইবনু উম্মে মাকতূম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার বাড়ী ও মসজিদের মধ্যে খেজুর ও বিভিন্ন বৃক্ষের বাগান রয়েছে। আর সবসময় আমি এমন কাউকেও পাই না যে আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসবে। আমাকে কি বাড়িতে সালাত আদায়ের সুযোগ দেওয়া যায়? তিনি বললেন, তুমি কি ইক্বামত শুনতে পাও? সে বলল, হ্যাঁ। রাসূল (ﷺ) বললেন, তাহ’লে সালা্তে এসো’। (ছহীহ তারগীব হা/৪২৯; আহমাদ হা/১৫৫৩০; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৪৭৯, সনদ হাসান ছহীহ)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ইবনু উম্মে মাকতূম বাড়িতে সালাত আদায়ের অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। অতঃপর সে যখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল তখন রাসূল (ﷺ) ডেকে বললেন, তুমি কি আযান শুনতে পাও? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহ’লে সালা্তে এসো’। (মুসলিম হা/৬৫৩; নাসাঈ হা/৮৫০; মিশকাত হা/১০৫৪)

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! মদীনার পথ বিভিন্ন ক্ষতিকর সাপ ও হিংস্র প্রাণীতে ভরপুর এবং আমি অন্ধ…। তখন তিনি বললেন, তুমি যদি আযান শুনতে পাও, তবে তোমার জন্য (বাড়িতে সালাত আদায়ের) কোন সুযোগ নেই। অন্যত্র এসেছে, তিনি বললেন, ‘আমি তোমার জন্য বাড়িতে সালাত আদায়ের কোন অনুমতি পাচ্ছি না’। (হাকেম হা/৯০৩; আবুদাউদ হা/৫৫২,৫৫৩; মিশকাত হা/১০৭৮)

ইবনুল মুনযির বলেন, ‘যেখানে একজন অন্ধ ব্যক্তির জন্য জামা‘আতে সালাত পরিত্যাগ করার অনুমতি নেই, সেখানে একজন সুস্থ ব্যক্তির অনুমতি না থাকার বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট’ [আল-আওসাত্ব ৪/১৩৪] ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেন, যেখানে অন্ধ ব্যক্তিকে বাড়িতে সালাত আদায়ের অনুমতি দেওয়া হ’ল না, যার কোন পথ দেখানোর লোক নেই। তাহ’লে অন্যদের বিষয়টি অতীব গুরুতর’।[মুগনী ২/৩]

শেয়ার:
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments