Why does Allah SWT test us

কেন আল্লাহ তা’আলা আমাদের পরীক্ষা করেন?

বিভাগ: কুরআন, বেসিক ইসলাম, মুসলিম চরিত্র

সম্ভাব্য পড়ার সময়: মিনিট

আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করছেন, এর কারণ এই যে, তিনি তাকে ভালোবাসেন

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি দুঃখকষ্টে পতিত করেন।[1]

পরীক্ষা যত কঠিনই হোক না কেন, নিশ্চিত থাকতে হবে যে আল্লাহর ইচ্ছায় আমি এটি পাস করতে পারবো। কারণ আল্লাহ কাউকে এমন কোন পরীক্ষায় ফেলবেন না, যা সে ব্যক্তি সহ্য করতে পারবে না।

لَا یُکَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا

আল্লাহ কোন ব্যক্তির উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু আরোপ করেন না[2]

যখন আশা হারাতে শুরু করবে, তখন মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ যাদেরকে ভালোবাসেন এবং কল্যাণ কামনা করেন তাদেরই পরীক্ষা করেন। এই উপলব্ধিই ধৈর্য ধারণ করার এবং জীবন চালিয়ে যাওয়ার শক্তি ও ক্ষমতা দেয়।

মহান আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর অনেক পরীক্ষা নিয়েছেন। কোরআনের কোথাও বলা হয়নি যে, ফেরাউন কিংবা নমরুদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। বরং তাদেরকে গজবে ধ্বংস করা হয়েছে। আল্লাহ বিপদ-মসিবত দিয়ে তাঁর পছন্দের বান্দাদের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, মুমিনের জন্য দুনিয়া কারাগারসদৃশ ও কাফিরের জন্য জান্নাতসদৃশ।[3]

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা যখন তার কোন বান্দার কল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তার কোন বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হতে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন।[4]

এ সনদেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ বিপদ যত মারাত্মক হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। আল্লাহ তাআলা যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদেরকে (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য (আল্লাহ্ তাআলার) সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে লোক তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহ্ তা’আলার) অসন্তুষ্টি বিদ্যমান।[5]

কষ্ট, পরীক্ষা এবং বিপদ আপনাকে প্রচুর পুরস্কার দেয় এবং আপনার নেক আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা আপনার পাপের পরিমাণকে ছাড়িয়ে যায় এবং পরকালে সেগুলোকে মুছে ফেলে

مَا یَفۡعَلُ اللّٰهُ بِعَذَابِکُمۡ اِنۡ شَکَرۡتُمۡ وَ اٰمَنۡتُمۡ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ شَاکِرًا عَلِیۡمًا

তোমরা যদি শোকরগুজারি কর আর ঈমান আন তাহলে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহ কী করবেন? আল্লাহ (সৎকাজের বড়ই) পুরস্কারদাতা, সর্ববিষয়ে জ্ঞাত।[6]

মানুষকে সতর্ক করার জন্যও তিনি বিপদ-আপদ দেন। যাতে করে বান্দা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। পরীক্ষা আমাদেরকে আল্লাহর আরো কাছে নিয়ে আসে এবং আমাদেরকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে দেয়।

وَ اِذَا مَسَّ الۡاِنۡسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنۡۢبِهٖۤ اَوۡ قَاعِدًا اَوۡ قَآئِمًا ۚ فَلَمَّا کَشَفۡنَا عَنۡهُ ضُرَّهٗ مَرَّ کَاَنۡ لَّمۡ یَدۡعُنَاۤ اِلٰی ضُرٍّ مَّسَّهٗ ؕ کَذٰلِکَ زُیِّنَ لِلۡمُسۡرِفِیۡنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ

আর যখন মানুষকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকে। অতঃপর আমি যখন তার বিপদ দূর করে দেই, তখন সে এমনভাবে চলতে থাকে মনে হয় যেন তাকে কোন বিপদ স্পর্শ করার কারণে সে আমাকে ডাকেনি। এভাবেই সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য তারা যা আমল করত তা শোভিত করে দেয়া হয়েছে।[7]

এটা মানুষের ঐ অবস্থার বিবরণ, যা অধিকাংশ মানুষের অভ্যাস। আল্লাহ তায়ালা বিপদে আমাদেরকে সাহায্য করতে পছন্দ করেন, বিপদে পড়লে আমরা অনেক আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে ছুটি, আর এই আন্তরিকতার সম্পর্কটাই আল্লাহর চাওয়া সর্বাবস্থায়; বিপদমুক্ত সময়েও।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন;

الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡهُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡهِ رٰجِعُوۡنَ

নিশ্চয়ই যারা বিপদকালে বলে থাকে, আমরা আল্লাহরই আর আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী[8]

اُولٰٓئِکَ عَلَیۡهِمۡ صَلَوٰتٌ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ وَ رَحۡمَۃٌ ۟ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُهۡتَدُوۡنَ

এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের রব-এর কাছ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ এবং রহমত বর্ষিত হয়, আর তারাই সৎপথে পরিচালিত।[9]

চেষ্টা করুন ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে, জানি এটা সহজ নয়, কিন্তু আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখুন এবং মনে রাখুন সবকিছুরই একটা কারণ আছে, আপনাকে নিয়ে আল্লাহর পরিকল্পনা আছে। আপনাকে শুধু ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং নিজেকে মনে করিয়ে দিতে হবে যে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসেন বলেই পরীক্ষা করছেন। আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখুন এবং উত্তম আশা রাখুন, দুনিয়াতে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকর-গুজার করে আর অস্বচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসীবাতে আক্রান্ত হলে সবর করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর।[10]

অতএব, আল্লাহ; যিনি অশেষ দয়াময় (আর-রহমান),

একনজরে...

পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের আত্মার পবিত্রতা বৃদ্ধি করেন এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শক্তিশালী করেন

সত্য-মিথ্যাকে স্পষ্ট করার জন্যও আল্লাহ তাআলা বিপদ আপদ দিয়ে থাকেন। কে মুনাফেক, কে অধৈর্য তার প্রমাণ বের হয়ে আসে বিপদ-আপদ থেকে। মুনাফেক ও দুর্বল ঈমানদারেরা অনেক সময় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময় আল্লাহকে মনে রাখে, তাঁর প্রতি অনুগত ও সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু, যখন কোনো বিপদ-আপদ আসে তখন আল্লাহকে ভুলে যায়, কুফুরি করে বা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

اَحَسِبَ النَّاسُ اَنۡ یُّتۡرَکُوۡۤا اَنۡ یَّقُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا وَ هُمۡ لَا یُفۡتَنُوۡنَ

মানুষ কি মনে করে যে, আমরা ঈমান এনেছি বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?

وَ لَقَدۡ فَتَنَّا الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ فَلَیَعۡلَمَنَّ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا وَ لَیَعۡلَمَنَّ الۡکٰذِبِیۡنَ

আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী।[11]

পরীক্ষা আসলে কষ্টিপাথর, যা সোনাকে আরও উজ্জ্বল করে এবং লোহাকে মরিচা ধরায়। ঠিক তেমনি, সত্যিকারের মুমিনের ঈমান কঠিন সময়ে আরও দৃঢ় হয়, আর দুর্বল ঈমানের ব্যক্তির ঈমান আরও দুর্বল হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি সে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ইবাদতের ওপর কায়েম থাকে। আর যদি কোনো পরীক্ষায় পড়ে, তখন সে পূর্বাবস্থায় (কুফুরিতে) ফিরে যায়। সে ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি। (সুরা হজ: ১১)

পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের পাপ ও ভুলত্রুটি ধুয়ে মুছে ফেলেন

আবূ সা’ঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।[12]

পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের ক্ষতিকর পরিণতি থেকে রক্ষা করেন

فَعَسٰۤی اَنۡ تَکۡرَهُوۡا شَیۡئًا وَّ یَجۡعَلَ اللّٰهُ فِیۡهِ خَیۡرًا کَثِیۡرًا

তবে হতে পারে যে তোমরা যাকে না-পছন্দ করছ, বস্তুতঃ তারই মধ্যে আল্লাহ বহু কল্যাণ দিয়ে রেখেছেন।[13]

জীবনে আমরা প্রায়ই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখো হই যা আমাদের অপছন্দ হয়। হয়তো একটি কঠিন পরীক্ষায় ফেল করার কারণে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি, একটি চাকরি না পাওয়ার কারণে মন খারাপ হয়, অথবা একটি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কারণে দুঃখিত হই। কিন্তু, এই মুহূর্তে আমরা যা ঘৃণা করি, তা আসলে আমাদের জন্য ভালো কিছু ঘটার পথ খুলে দিতে পারে।

এটা আমাদেরকে আরও ভালো একটি চাকরি পেতে সাহায্য করবে, অপমানকারী একটি সম্পর্ক থেকে মুক্ত করবে, অথবা আমাদেরকে আরও শক্তিশালী এবং অনমনীয় বানিয়ে তুলবে। আমরা সবসময় জানি না কি ভালো, কি মন্দ। আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং তিনি কখনো আমাদের ক্ষতি করতে চান না। তাই, ধৈর্য ধারণ করুন, তাঁর প্রতি ঈমান রাখো, এবং ভরসা রাখুন যে তিনি আমার জন্য সবচেয়ে ভালোটা বেছে নেবেন।

শেষ পর্যন্ত, জীবন হলো উত্থান-পতনের মিশ্রণ। কখনো সুখ, কখনো দুঃখ। কিন্তু, প্রতিটি অভিজ্ঞতা, ভালো হোক বা মন্দ, আমাদের শিখিয়ে দেয় এবং আমাদের বড় করে তোলে। সবসময় মনে রাখবেন যে আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের পরিকল্পনার চেয়ে অনেক বড় এবং উত্তম।

পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ ঈমান শক্তিশালী করেন

সাদ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ মানুষের সর্বাপেক্ষা কঠিন পরীক্ষা হয়? তিনি বলেনঃ

নবীগণের। অতঃপর মর্যাদার দিক থেকে তাদের পরবর্তীদের, অতঃপর তাদের পরবর্তীগণের। বান্দাকে তার দীনদারির মাত্রা অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। যদি সে তার দীনদারিতে অবিচল হয় তবে তার পরীক্ষাও হয় ততটা কঠিন। আর যদি সে তার দীনদারিতে নমনীয় হয় তবে তার পরীক্ষাও তদনুপাতে হয়। অতঃপর বান্দা অহরহ বিপদ-আপদ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। শেষে সে পৃথিবীর বুকে গুনাহমুক্ত হয়ে পাকসাফ অবস্থায় বিচরণ করে।[14]

পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার কল্যাণ কামনা করেন এবং,

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি দুঃখকষ্টে পতিত করেন।[15]

পরীক্ষা আমাদেরকে আল্লাহর আরো কাছে নিয়ে আসে এবং আমাদেরকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে দেয়

وَ اِذَا مَسَّ الۡاِنۡسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنۡۢبِهٖۤ اَوۡ قَاعِدًا اَوۡ قَآئِمًا ۚ فَلَمَّا کَشَفۡنَا عَنۡهُ ضُرَّهٗ مَرَّ کَاَنۡ لَّمۡ یَدۡعُنَاۤ اِلٰی ضُرٍّ مَّسَّهٗ ؕ کَذٰلِکَ زُیِّنَ لِلۡمُسۡرِفِیۡنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ

আর যখন মানুষকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকে। অতঃপর আমি যখন তার বিপদ দূর করে দেই, তখন সে এমনভাবে চলতে থাকে মনে হয় যেন তাকে কোন বিপদ স্পর্শ করার কারণে সে আমাকে ডাকেনি। এভাবেই সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য তারা যা আমল করত তা শোভিত করে দেয়া হয়েছে।[16]

আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আমাদের বিভিন্ন উপায়ে পরীক্ষা করবেন। কুরআনে, সূরা বাকারাহ-এর ১৫৫ নম্বর আয়াতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তিনি আমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ কমে যাওয়া এবং ফল-ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ

আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।[17]

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:

একটি বিপদ যা তোমাকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয়, সেটি এমন একটি নেয়ামত অপেক্ষা অনেক উত্তম যা তোমাকে আল্লাহর স্মরণবিমুখ করে দেয়।

জীবনে আমরা যেসব সমস্যার মুখোমুখো হই, সেগুলো আল্লাহর কাছাকাছী আসার জন্য একটি সুযোগ হতে পারে। কখনো কখনো আমরা সুখ-স্বচ্ছন্দে এতোটাই মগ্ন হয়ে পড়ি যে, আল্লাহকে ভুলে গিয়ে দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। কিন্তু, যখন কোনো বিপদ আসে, তখন আমরা আমাদের দুর্বলতা বুঝতে পারি এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে বাধ্য হই। এই নম্রতা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা আসলে আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, কারণ এটি আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করে এবং আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ককে গভীর করে।

যেমন:

  • একজন ব্যক্তি হয়তো চাকরি হারিয়ে ফেলে, যার কারণে সে আল্লাহর কাছে সাহায্য চায় এবং তাঁর প্রতি তার নির্ভরতা বাড়ে। এই অভিজ্ঞতাটি তাকে আরও ধৈর্যশীল এবং বিনয়ী করে তুলতে পারে, ফলে ঈমান তার আরও শক্তিশালী হয়।
  • একজন ব্যক্তি হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়ে, যার কারণে সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এই অভিজ্ঞতাটি তাকে তার অনেক ভুল বুঝতে সাহায্য করতে পারে এবং দুনিয়ার নশ্বরতা সম্পর্কে উপলব্ধি দিতে পারে।

অর্থাৎ আল্লাহকে সকল পরিস্থিতিতে কাছে পাওয়াই হল মূল সফলতা, যা আল্লাহর অশেষ রহমতে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে অতিক্রমকালে বান্দা অর্জন করে।

আল্লাহর অনুগত ও পছন্দের বান্দারা বিপদ-মসিবতকে কল্যাণকর মনে করেন

হজরত জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামতের দিন বিপদে পতিত ব্যক্তিদের যখন প্রতিদান দেওয়া হবে, তখন (পৃথিবীর) বিপদমুক্ত মানুষেরা আফসোস করে বলবে, হায়! দুনিয়াতে যদি কাঁচি দ্বারা তাদের শরীরের চামড়া কেটে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হতো!’[18]

আল্লাহ তাআলা যাদের বেশি পছন্দ করেন, তাদের দুঃখ-কষ্ট দিয়ে পরিশুদ্ধ করেন এবং এক অনন্য মর্যাদায় নিয়ে যান

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী কারিম (স.)-এর কাছে ছিলাম, তখন তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তার ওপর আমার হাত রাখলে তর গায়ের চাদরের ওপর থেকেই তার শরীরের প্রচণ্ড তাপ অনুভব করলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কত তীব্র জ্বর আপনার। তিনি বলেন, আমাদের (নবী-রাসুলদের) অবস্থা এমনই হয়ে থাকে। আমাদের ওপর দ্বিগুণ বিপদ আসে এবং দ্বিগুণ পুরস্কারও দেওয়া হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কার ওপর সর্বাধিক কঠিন বিপদ আসে? তিনি বলেন, নবীদের ওপর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তারপর কার ওপর? তিনি বলেন, তারপর নেককার বান্দাদের ওপর। তাদের কেউ এতটা দারিদ্র্যপীড়িত হয় যে, শেষ পর্যন্ত তার কাছে তার পরিধানের কম্বল ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তাদের কেউ বিপদে এত শান্ত ও উৎফুল্ল থাকে, যেমন তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ প্রাপ্তিতে আনন্দিত হয়ে থাকে।[19]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কোনো ব্যক্তির জন্য বিনাশ্রমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে আল্লাহ তার শরীর, সম্পদ অথবা সন্তানকে বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর সে তাতে ধৈর্যধারণ করলে শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত উক্ত মর্যাদার স্তরে উপনীত হয়।[20]

❀ মুসিবতের সময়ের দোয়া ❀

কোনও বান্দা যদি বিপদ-মুসিবতের মুখোমুখি হয়ে বলে –

إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ اَللَّهُمَّ أْجُرْنِيْ فِي مُصِيْبَتِيْ وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِّنْهَا

উচ্চারণ: ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জিউন। আল্লা-হুম্মাঅ জুরনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফ লী খাইরাম মিনহা

অর্থ: আমরা আল্লাহ্‌র জন্য, আর আমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ্‌! আমার মুসিবতে তুমি আমাকে আশ্রয় দাও! এবং তা থেকে উত্তম কিছু আমাকে দাও!

আল্লাহ্‌ অবশ্যই এর বদলে তাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দেবেন।(মুসলিমঃ ৯১৮)

রেফারেন্সঃ

[1] সহীহ বুখারী | ৫৬৪৫

[2] আল-বাকারা | ২৮৬

[3] মুসলিম: ২৯৫৬

[4] সহীহ, সহীহাহ (১২২০), মিশকাত (১৫৬৫)

[5] হাসান, ইবনু মা-জাহ (৪০৩১); সুনান আত তিরমিজী ২৩৯৬

[6] আন-নিসা | ১৪৭

[7] ইউনুস | ১২

[8] আল-বাকারা | ১৫৬

[9] আল-বাকারা | ১৫৭

[10] সহীহ মুসলিম ২৯৯৯

[11] আল-আনকাবূত | ২-৩

[12] সহীহ বুখারী ৫৬৪১, মুসলিম ২৫৭৩

[13] আন-নিসা | ১৯

[14] সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২৩, তিরমিযী ২৩৯৮, মিশকাত ১৫৬২

[15] সহীহ বুখারী | ৫৬৪৫

[16] ইউনুস | ১২

[17] আল-বাকারা | ১৫৫

[18] তিরমিজি: ২৪০২

[19] ইবনে মাজাহ: ৪০২৪

[20] আবু দাউদ: ৩০৯০

শেয়ার:
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments