একনজরে...
১) জান্নাত লাভ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মহামহিম আল্লাহ বলেছেন, আমি আপনার উম্মাতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি এবং আমি আমার নিকট এ অঙ্গীকার করছি যে, যে ব্যক্তি যথাযতভাবে ওয়াক্তমত এসব সলাতের হেফাজত করবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে ব্যক্তি তা যথাযতভাবে হেফাজত করবে না, তার জন্য আমার পক্ষ থেকে কোন অঙ্গীকার নাই। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৪০৩)
২) জাহান্নাম থেকে মুক্তি
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঐ ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে ( ফজর ও আসর) সলাত আদায় করবে। (সুনানে আবু দাউদ ৪২৭)
৩) আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ
রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি ফযরের নামায আদায় করল সে আল্লাহর হিফাজাতে চলে গেল। অতএব তোমরা আল্লাহ তা’আলার হিফাজাতকে চূর্ণ কর না, তুচ্ছ মনে কর না। (জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২২২)
৪) ক্ষমা লাভ
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “বলতো যদি তোমাদের কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তাঁর দেহে কোন ময়লা থাকবে? এ হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলা বান্দার গুনাহসমুহ মিটিয়ে দেন।” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫২৮)
৫) মর্যাদা বৃদ্ধি
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে কোন বান্দাহ আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর জন্য একটি সাজদাহ্ করে, আল্লাহ তা’আলা তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৮৮)
৬) আল্লাহর নৈকট্য লাভ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সিজদার অবস্থায়ই বান্দা তার রবের অধিক নিকটবর্তী হয়ে থাকে। অতএব, তোমরা (সিজদায়) অধিক পরিমাণ দু‘আ কর। (সহীহ মুসলিম ৪৮২)
৭) আল্লাহর সাথে কথোপকথন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ আমার এবং আমার বান্দার মাঝে আমি সালাতকে (সূরা ফাতিহা) অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করে নিয়েছি এবং আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়।
অতঃপর বান্দা যখন বলে,(সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য); আল্লাহ তাআলা এর জবাবে বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। সে যখন বলে, (তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু); আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার গুণাবলী বর্ণনা করেছে, গুণগান করেছে। অতঃপর সে যখন বলে, (কর্মফল দিবসের মালিক), তিনি বলেন, আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছে। আর কখনো বলেছেন, আমার বান্দা (তার সব কাজ) আমার উপর সোপর্দ করেছে। সে যখন বলে, (আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি); তিনি বলেন– এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। যখন সে বলে, (আমাদের সরল পথ প্রদর্শন কর, তাদের পথে যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ দান করেছ, যারা ক্রোধ নিপতিত নয়, পথভ্রষ্টও নয়); তখন তিনি বলেন, এটা কেবল আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দা যা চায় তা সে পাবে। (সহীহ মুসলিম ৭৬৪)রাসূলাল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে সে তার সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। কেননা সে যতক্ষণ তার মুসল্লায় থাকে, ততক্ষণ মহান আল্লাহর সাথে চুপে চুপে কথা বলে। আর ডান দিকেও ফেলবে না। তার ডানদিকে থাকেন ফেরেশতা। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪১৬)
৮) আল্লাহর দর্শন লাভ
একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ঐ চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভীড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের এবং অস্ত যাওয়ার পূর্বের সালাত (শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করতে পারলে তোমরা তাই করবে। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন, “কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্ পাঠ কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে”- (সুরা ক্বাফ ৫০:৩৯) (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৫৪)
৯) রাসূলাল্লাহ ﷺ এর সান্নিধ্য লাভ
রবী’আহ ইবনু কা’ব আল-আসলামী (রা) বলেন, যখন আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রাত যাপন করতাম, তখন তাঁর উযুর পানি ও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণ করে দিতাম। তিনি বললেনঃ তুমি আমার কাছে কিছু চাও। আমি বললাম , জান্নাতে আপনার সান্নিধ্যে থাকতে চাই। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ আরো কিছু? আমি বললাম, এটাই যথেষ্ট। তিনি বললেনঃ তাহলে অধিক পরিমানে সাজদাহ করে এ কাজে আমাকে সাহায্য করো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৩২০)
১০) জান্নাতে ঘর
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিন রাতে বার রাক’আত নামায আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করা হবে। যুহরের নামাযের পূর্বে চার রাক’আত ও পরে দুই রাক’আত, মাগরিবের নামাযের পরে দুই রাক’আত, ‘ইশার নামাযের পরে দুই রাক’আত এবং ভোরের ফজরের নামাযের পূর্বে দুই রাক’আত। (জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৪১৫)
১১) সালাত নূর,সাক্ষ্য ও মুক্তির উপায়
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নামাযের হিফাযত করবে সে নামায তার জন্য কিয়ামত দিবসে নূর, দলীল এবং মুক্তির উপায় হবে। আর যে তার হিফাযত করবে না, তার জন্য তা নূর, দলীল ও মুক্তির উপায় হবে না। সে কিয়ামত দিবসে কারুন, ফিরাউন, হামান ও উবাই ইবন্ খালাফের সাথে থাকবে।
(মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ৮১)
১২) আল্লাহর প্রিয় আমল
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন আমল আল্লাহ্র নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, ‘যথা সময়ে সালাত আদায় করা। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫২৭)
১৩) অন্তরের প্রশান্তি
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পার্থিব বস্তুর মধ্যে স্ত্রী ও সুগন্ধী আমার নিকট পছন্দনীয় করা হয়েছে এবং নামাযে রাখা হয়েছে আমার নয়নের প্রশান্তি। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩৯৩৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রা) কে বলতেন,হে বিলাল। সলাত ক্বায়িম করো। আমরা এর মাধ্যমে স্বস্তি লাভ করতে পারবো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৮৫)
১৪) ৫০ ওয়াক্তের সওয়াব লাভ
মিরাজের রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছিল। অতঃপর কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্তে সীমাবদ্ধ করা হয়। অতঃপর ঘোষণা করা হল, হে মুহাম্মাদ! আমার নিকট কথার কোন অদল বদল নাই। তোমার জন্য এই পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব রয়েছে। (জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২১৩)
১৫) প্রফুল্লভাব নিয়ে দিন শুরু
আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঠ দেয়। প্রতি গিঠে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহ্কে স্মরণ করে একটি গিঠ খুলে যায়, পড়ে উযূ করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়, অতঃপর সালাত আদায় করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয়, উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলূষ কালিমা ও আলস্য সহকারে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১১৪২)
১৬) অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে মুক্তি লাভ
তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর। (আল-আনকাবূত | আয়াত ৪৫)